বিএনপি ‘লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি’ নিয়েই নয়া পল্টনে জড়ো হয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাস্তায় যাতে কেউ সমাবেশ করতে না পারে, সেজন্য মাঠে থাকবে তাদের ছেলেরা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানি এবং ব্যাপক ধর-পাকড়ের পরদিন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে এক যৌথসভায় কাদেরের এ মন্তব্য এল।
তিনি বলেন, “আজকে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা করতে উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। তাদের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা আজ সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি, জঙ্গিদের মাঠে নামিয়ে লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি গতকাল তারা কার্যকর করেছে।”
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে বিএনপিকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বিকাল ৩টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ পরে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে বিএনপিকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোয়াট সদস্যদেরও দেখা যায় সেখানে।
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে নয়া পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাখানেক সংঘর্ষের পর বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকে তল্লাশি চালায় পুলিশ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার সেই অভিযানে তিনশর মতো নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়।
এদিকে ওই ঘটনায় পুলিশসহ আহত হন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে মকবুল নামে ৩২ বছর বয়সী এক যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশের এমন অভিযানকে ‘জঘন্য’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দাবি করেছেন, পুলিশ অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল। তবে পুলিশ সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, বিএনপির কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছুড়ে মারায় পুলিশ বাধ্য হয়ে অভিযান চালায়।
বিএনপি নয়াপল্টনের রাস্তাতেই ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করতে চায়। পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও তাতে তারা রাজি নয়।
বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, তাদের পছন্দসই জায়গা না পেলে নয়া পল্টনেই তারা ১০ তারিখের সমাবেশ করবেন। অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল, রাস্তায় কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। কোনো বিশৃঙ্খলা পুলিশ হতে দেবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বৃহস্পতিবার একই সুরে বলেন, “রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে কষ্ট দিয়ে সমাবেশ করা, এটা আর হতে দেওয়া হবে না। আমরাও করব না। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ আমরা মহানগর নাট্যমঞ্চে করব। আমরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করব না। তাদের কি দুরভিসন্ধি, যে তারা রাস্তায় জন সমাবেশ করতে চায়? আগুন নিয়ে খেলা করবে, ভাঙচুর করবে। এই সব দুরভিসন্ধি আমরা বুঝে গেছি।"
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাড়ায় মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সারা বাংলাদেশের সব জেলা-উপজেলা, মহানগর, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা আজ থেকে সতর্ক পাহারায় থাকবেন। আক্রমণ আমরা করব না, আক্রমণের উসকানি দিলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।”
সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “এই বিজয়ের মাস আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে তুলে দিতে পারি না। এটা আমাদের শপথ। অকারণে আক্রমণ আমরা করতে যাব না। শান্ত থেকে ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের যেন কোনো দুর্নাম না হয়। আক্রমণকারী হিসেবে তারা শুরু করেছে, আমরাও দেখব।"
বুধবারের ঘটনা নিয়ে বলতে গিয়ে গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “অনেকেই নিরপেক্ষতার কথা বলেন, বস্তুনিষ্ঠতার কথা বলেন। পুলিশ মার খেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে, কেউ ছবি দিলেন না। বিআরটিসির গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ পত্রিকায় ছবি দিলেন না। এই দুর্ব্যবহার কেন করা হচ্ছে? সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলল, সেই ছবি কেউ দিলেন না। কেন এমনটা করা হচ্ছে? মিডিয়ার একটা অংশ কেন পক্ষ নিচ্ছে? পক্ষপাতিত্ব করছে। এটা আমার অভিযোগ।
"শেখ হাসিনার এত উন্নয়ন, সব রেকর্ড ছাড়িয়ে উন্নয়ন করেছেন বিএনপি চোখে দেখে না, তিন্তু মিডিয়া তো দেখার কথা। আমরা সত্যকে তুলে ধরার কথা বলছি।"
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশিদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিদেশিরা আমাদের বন্ধু, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটা একপেশে, এটা উচিৎ নয়। আমরা ৬ জানুয়ারির নির্বাচন দেখেছি, এখন পর্যন্ত একপক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচন চুরি করা হয়েছে। এটা কি? আদর্শিক গণতন্ত্র?
"আমরা আপনাদের বন্ধু, আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করবেন না। জনতা কার সঙ্গে, সেটা… যশোর, চট্টগ্রাম কক্সবাজারের সমাবেশ দেখুন, বুঝতে পারবেন। জনগণ কী চায় বুঝতে পারবেন।"
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ দপ্তর সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন এ সময়।