ঢাকার গোলাপবাগের বহুল আলোচিত সমাবেশে উপস্থিন বিএনপিকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, পথে পথে নানা বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে তাদের। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও নানা নাটকীয়তার পর শনিবার সকাল ১১টায় শুরু হতে যাওয়া এই সমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার থেকেই নেতা-কর্মীরা মাঠে যেতে শুরু করেন।
পুরো মাঠজুড়ে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি ক্যাপ বসে হাজারো নেতা-কর্মী বসে ছিলেন শনিবার সকালে, অনেকের হাতে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকাও রয়েছে। তারা অপেক্ষায় আছেন সমাবেশ শুরুর।
ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা শ্রমিক দলের কর্মী সোলায়মান বেপারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েকদিন এই গণসমাবেশে নিয়ে সরকার ও পুলিশ নাটক করেও আমাদের সমাবেশকে বানচাল করতে পারেনি। আমাদের মহাসচিবকে গ্রেপ্তার করেছে, আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভাংচুর করেছে, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। তারপরও আমাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি।
“নারায়ণগঞ্জ থেকে আমাদের আসতে পথে পথে বাধা দেওয়া হয়েছে, অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করেছে। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি ইত্যাদি নানা কথা। তারপরও আমরা ঠিকই সমাবেশে এসেছি। কেউ আমাদেরকে রুখতে পারেনি।”
ঢাকা বিভাগীয় এই সমাবেশ নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সেখানে তারা অনুমতি পায়নি। এরধ্যে নয়া পল্টনে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের উপর গত বুধবার চড়াও হয় পুলিশ, সংঘর্ষে নিহত হন একজন। এরপর পুলিশ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ পাঁচশর মতে নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
এই সমাবেশের আগে দুদিন ধরে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। বিএনপিকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও পাহারা বসিয়েছে।
এর মধ্যেই গোলাপবাগে হাজির হওয়া মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা যুবদলকর্মী আবদুস সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই দিন আগে ঢাকায় এসেছি। লুকিয়ে ছিলাম বিভিন্ন জায়গায়। কারণ পুলিশ হোটেলে অভিযান চালিয়েছে।
“গতকাল রাতে যখন গোলাপবাগ মাঠে আসি, মনে হয়েছে এটা নির্যাতিত মানুষের সমাবেশ। এমন অনেকের সাথে দেখা হয়েছে যে, একেক জনের মামলার সংখ্যা ২০ থেকে শুরু ৪০/৫০টি। ঢাকার এই সমাবেশকে ঘিরে কত মামলা হয়েছে, তারপরও কি সমাবেশে মানুষের ঢল কমাতে পেরেছে? পারেনি।”
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আসা মহিলা দলের কর্মী আয়েশা খাতুন বলেন, “আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে গলিতে গলিতে ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে, যাতে কেউ সমাবেশ না যেতে পারে। অনেক বাধা ডিঙিয়ে সকালে সমাবেশস্থলে পৌঁছেছি। এটাতেই মনে খুশি লাগছে। মনে হচ্ছে- মুক্ত আকাশে নিঃশ্বাস নিতে পারছি।”
গত রাতে গোলাপবাগ মাঠে হাজির হওয়া বিএনপির অনেক কর্মী ফেইসবুকে লাইভ করেছিলেন। তবে সকাল থেকে সেখানে মোবাইল ইন্টারনেট নেই বললেই চলে।
এজন্য সরকারকে দায়ী করে মহিলা দলের কর্মী রোজিনা আখতার বলেন, “সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নেট স্লো করে দিয়েছে, যাতে কেউ লাইভ না করতে পারে।”
এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাবেশ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সকাল ৯টায়ই সমাবেশ মঞ্চে বসেছেন। মঞ্চে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসহ দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছে।
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর থেকে নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দিয়েছে। ঢাকার বাইরে থাকা আসা অনেকে গোলাপবাগে খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটিয়েছেন।
কমলাপুর ও সায়েদাবাদ এলাকার সড়কগুলো দিয়ে নেতা-কর্মীদের মিছিল ঢুকছে সমাবেশস্থলে। আগত নেতা-কর্মীদের মাথায় লাল-সবুজ রঙের ক্যাপ, অনেকে আবার মাথায় লাল-হলুদ ব্যাজ পরেছেন। খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসের মুক্তির দাবির সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন তারা। সমাবেশ থেকে বেলুনও ওড়ানো হয়েছে।
মাঠের চারপাশে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পুলিশের নজরদারিও। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ব্যাপক পুলিশ, সাঁজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান মোতায়েন রাখা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই গণসমাবেশ ‘জনসমুদ্রে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আমান।
তিনি বলেন, “মানুষের এই ঢল, মানুষের এ জোয়ার রুখতে পারবে না। যত নির্যাতনই হোক মানুষ আরও ফুঁসে উঠেছে। আজকের সমাবেশের চিত্র সেই বার্তাই দিচ্ছে।”