বিবিসি বাংলাসহ দশটি ভাষার রেডিও সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-বিবিসি। তবে কোন ভাষা বিভাগই পুরোপুরি বন্ধ করা হচ্ছে না এবং অনেকগুলো অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
বিবিসি বাংলা ছাড়াও আরও যেসব ভাষার রেডিও সম্প্রচার বন্ধ হচ্ছে তার মধ্যে আছে আরবি, পার্সিয়ান, চীনা, কিরগিজ, উজবেক, হিন্দি, ইন্দোনেশিয়ান, তামিল ও উর্দু।
১৯৪১ সালের ১১ই অক্টোবর বাংলায় ১৫ মিনিটের সাপ্তাহিক সম্প্রচার শুরুর মাধ্যমে যাত্রা হয়েছিল বিবিসি বাংলার রেডিও কার্যক্রমের। পরে পর্যায়ক্রমে সংবাদ সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৬৫ সালে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ৩৮২টি পদ শূন্য করার প্রস্তাব করেছে, যার উদ্দেশ্য ২৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড (৩২০ কোটি টাকার বেশি) সঞ্চয় করা।
তবে বার্ষিক মোট ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড সঞ্চয়ের অংশ হিসেবে সিবিবিসি ও বিবিসি ফোরকেও অনলাইনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিবিসি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমন্বিত চাপই 'তাদের এ কঠিন সিদ্ধান্তের' দিকে নিয়ে গেছে।
তারা আরও বলেছে যে ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে আরও আধুনিক, ডিজিটাল ও সুবিন্যস্ত করার কৌশলকে সমর্থন করতে এ পরিকল্পনা সহায়তা করবে।
এখন যেসব সার্ভিস শুধু অনলাইনে থাকবে তার মধ্যে চীনা, গুজরাটি, ইন্দোনেশিয়ান, পিজিন, ইগবো, ইউরুবা ও উর্দু আছে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান। রেডিও, টিভি ও ডিজিটাল মাধ্যমে কার্যক্রম আছে তাদের। এখন সপ্তাহে প্রায় ৩৬৪ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছায় বিবিসি, যার অর্ধেকই অনলাইনে।
বিবিসি বলছে, কোন ভাষা বিভাগই পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না এবং ওয়ার্ল্ড সার্ভিস বিপদের সময়েও শ্রোতাদের সেবা দিয়ে যাবে এটা নিশ্চিত করতে যে রাশিয়া, ইউক্রেন ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোর মানুষ বিবিসির নিউজ সার্ভিসগুলো পাবে।
ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ইংরেজি বিশ্বব্যাপী সার্বক্ষণিক সংবাদ পরিবেশন অব্যাহত রাখবে এবং করপোরেশন বলছে, নতুন অনুষ্ঠানসূচী, অনুষ্ঠান ও পডকাস্ট পরে ঘোষণা করা হবে।
ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ডিরেক্টর লিলিয়ান ল্যান্ডর বলেছেন, "বিবিসির ভূমিকা বিশ্বব্যাপী কখনোই কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদের জন্য কোটি কোটি মানুষের কাছে এটি বিশ্বস্ত, বিশেষ করে যেখানে সংবাদ কম পৌঁছায়।"
"আমরা সংকটের সময়ে মানুষকে সহায়তা করি। ইংরেজি ও আরও চল্লিশটি ভাষায় শ্রোতাদের কাছে আমরা ভালো সাংবাদিকতা নিয়ে যাবো এবং আমাদের সংবাদের আরও গভীরে গিয়ে আমাদের সাংবাদিকতাকে আরও প্রভাবশালী ও অর্থপূর্ণ করে তুলবো।"
বিবিসির প্রস্তাবনায় আরও যা আছে:
•কিছু সার্ভিস লন্ডন থেকে সরিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের নিকটে নিয়ে যাওয়া; যেমন থাই সার্ভিস লন্ডন থেকে ব্যাংককে, কোরিয়ান সার্ভিস সউলে, বাংলা সার্ভিস ঢাকায় এবং ফোকাস অন আফ্রিকা টিভি বুলেটিন নাইরোবিতে নেয়া হবে।
•লন্ডনে নতুন একটি চীনা ইউনিট চালু করা
•আফ্রিকা কনটেন্ট হাব করা যারা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করবে
•আরবি ও পার্সিয়ান সার্ভিসের টিভি সম্প্রচার অব্যাহত রাখা
•আরও অনুসন্ধান ও ডকুমেন্টারি তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়ানো
প্রস্তাবনাটি নিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ও ইউনিয়নের সাথে আলোচনা করা হবে বলে বলেছেন সম্প্রচার ইউনিয়ন-বেটকুর প্রধান ফিলিপ্পা চাইল্ডস।
তিনি বলেন, " গণমাধ্যমক্ষেত্রে পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বিবিসিকে অবশ্যই মানিয়ে নিতে হবে। কিন্তু আবারো প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাইসেন্স ফি আটকে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে তহবিল নিয়ে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জ এই প্রস্তাবগুলোকে অনিবার্য করে তুলেছে।"