ম্যাচ তখন শেষ। অনেক দর্শক বেরিয়ে গেছেন স্টেডিয়াম থেকে। আর্জেন্টিনার কিছু সমর্থক তখনও লুসাইল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে। তাদের চোখেমুখে বিষাদ। র্যাঙ্কিংয়ে ৪৮ ধাপ পিছিয়ে থাকা সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রিয় দল হেরে যাবে, সেটা বোধহয় কল্পনাও করেননি তারা। দলটির বেশিরভাগ সমর্থকেরই হয়তো একই অবস্থা। অধিনায়ক লিওনেল মেসি অবশ্য বলছেন, এশিয়ার দলটির এমন পারফরম্যান্সে অবাক নন তারা। দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় দল ভুল করেছে বলে মনে করেন তিনি।
সাড়ে তিন বছরে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে কাতারে পা রেখেছিল আর্জেন্টিনা। এবারের বিশ্বকাপের ফেভারিট দলগুলোর একটি তারা। সেই দলকেই মঙ্গলবার এক ঝটকায় আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনে সৌদি আরব।
‘সি’ গ্রুপের ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে বিশ্বকাপ ইতিহাসে বড় অঘটনের জন্ম দেয় টুর্নামেন্টের আগে নিজেদের সবশেষ ১০ ম্যাচের মাত্র দুটিতে জেতা দলটি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ম্যাচের পর আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমকে মেসি বললেন, বিশ্বকাপ অভিযানের শুরুটা এমন হবে, ভাবতেও পারেননি তারা।
“এটা এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে এই দলের খেলোয়াড়রা কখনও পড়েনি। অনেকদিন পর আমরা এরকম বড় একটা ধাক্কা খেলাম। এমন শুরুর কথা আমরা ভাবিনি।”
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য দারুণ হয় আর্জেন্টিনার। দশম মিনিটে পেনাল্টি গোলে দলকে এগিয়ে নেন মেসি। এরপর প্রথমার্ধে আরও তিনবার বল জালে পাঠায় তারা, তবে অফসাইডের বাঁশি বাজে প্রতিবারই।
দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারিয়ে ফেলে দুবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। গতিময় ফুটবলে এই অর্ধের শুরুতে পাঁচ মিনিটে দুই গোল করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় সৌদি আরব। ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক সময় থাকলেও পারেনি কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নরা।
দুই গোল হজমের পর ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করেন নিজের পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা মেসি।
“পাঁচ মিনিটের ভুলে আমরা ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়লাম এবং তারপর ম্যাচটা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমরা একতা হারিয়ে ফেলি এবং বল এদিক-ওদিক মারতে থাকি।”
“আমরা জানতাম, সুযোগ দিলেই তারা (ভালো) খেলবে। তারা আমাদের অবাক করেনি। আমরা জানতাম, তারা এমন কিছু করতে পারে।”
বিশ্ব সেরার মঞ্চে ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে এসে এখন গ্রুপ পর্বের বিতরণী পার হওয়ার পথই কঠিন হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার জন্য। পরের দুই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো ও পোল্যান্ড। এই দুই ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়ে পরের ধাপে যাওয়ার প্রত্যয় মেসির কণ্ঠে।
“অবশ্যই, আমাদের এখন জয়ের বিকল্প নেই। আমরা যা ভুল করেছি, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদের এখন মৌলিকত্বে ফিরে যেতে হবে।”
“আমরা ঠিক আছি। অবশ্যই এই ফলে আমরা আঘাত পেয়েছি। তবে মানুষকে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এই দল তাদেরকে হতাশ করবে না। পরের দুই ম্যাচে আমরা সেটা করে দেখাব। আমরা এই ধরনের ম্যাচ আগেও খেলেছি এবং আমরা ভালো পারফর্ম করব। এখন আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার, আমরা কতটা শক্তিশালী, তা দেখানোর সময়।”