বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র; একইসঙ্গে ঢাকায় দেশটির নাগরিকদেরকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার এক প্রশ্নে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বলপ্রয়োগ ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। মতপ্রকাশ, সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ সমাগমের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান ও তা রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।
“পুলিশের নিপীড়ন, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং বিরোধীদলের সমাগম ও সমাবেশের উপর বিধিনিষেধের ঘটনাতেও আমরা উদ্বিগ্ন।”
যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্বেগ ও সতকর্তা জানানোর মধ্যেই বুধবার ঢাকার নয়া পল্টন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে আহত একজন হাসপাতালে মারা গেছেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয় থেকে পুলিশ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাসহ ডজন খানেক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে।
ব্রিফ্রিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, আমরা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে আইনের শাসনকে শ্রদ্ধা জানানোর এবং সংঘাত, নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
“আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এমন অবস্থা নিশ্চিতের আহ্বান জানাই, যেখানে কোনো দল বা প্রার্থী একে অপরকে হুমকি ও উস্কানি দেবে না; কিংবা একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়াবে না।”
সংঘাতের ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, “সত্যিকারের নির্বাচনের ক্ষেত্রে দরকার সংঘাত, নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ ছাড়াই স্বাধীনভাবে ভোটারদের কাছে যেতে পারা।
“সংঘাতের ঘটনাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার এবং অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে সরকারকে উৎসাহিত করছি।”
নাগরিকদের জন্য সতর্কতা
দুই রাজনৈতিক শিবিরের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কথা তুলে ধরে ঢাকায় নিজ দেশের নাগরিকদের জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশে থাকা নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বুধবার এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ আহ্বান করেছে।
“যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের উচিত সতর্ক থাকা এবং মনে রাখা যে, সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও তা বিরোধ আর সংঘাতে রূপ নিতে পারে। আপনার উচিত প্রতিবাদ সমাবেশ এড়িয়ে চলা এবং বড় সমাগমের আশেপাশের এলাকায় সতর্কতা অবলম্বন করা।”
এক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সেই পরামর্শ নাগরিকদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, “নিজস্ব নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করুন। স্থানীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিষয়ে সতর্ক থাকুন এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার জন্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে নজর রাখুন।”
পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বার্তায় বলা হয়, বড় জটলা ও প্রতিবাদ এড়িয়ে চলুন; সবসময় আপনার আশেপাশের এলাকার বিষয়ে সতর্ক থাকুন; স্থানীয় সংবাদে নজর রাখুন; সতর্ক থাকুন এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য সবসময় চার্জসহ মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখুন।”
সতর্কতা জারির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বার্তায় বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি বা এর আগে বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
“রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ও অন্যান্য নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে থাকায় রাজনৈতিক সমাবেশ ও প্রতিবাদ সভা বেশি পরিমাণে হতে পারে।”