ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির শহরগুলোতে রাশিয়ার চালানো বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করার অঙ্গিকার জানিয়েছে কিইভ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
রাশিয়া ও ক্রাইমিয়াকে সংযুক্তকারী কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুতে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটার দুই দিন পর সোমবার সকালে ইউক্রেইনের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। ক্রাইমিয়ার কের্চ সেতুতে বিস্ফোরণের জন্য মস্কো কিইভকে দায়ী করেছে।
ইউক্রেইনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া তাদের ওপর ৮৪টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
সকালের ব্যস্ত সময়ে হামলার সতর্ক সঙ্কেত শুনে হাজার হাজার মানুষ বোম্ব শেল্টারগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ ও আরও আটটি অঞ্চলের ১১টি ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো স্থাপনা’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী দেনিশ সুমাইহাইল জানিয়েছেন।
এসব হামলায় মোট ১৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছে এবং ইউরোপে বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ইউক্রেইন।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় কিইভ, লভিভ, তেরনোপিল ও জেতোমের, মধ্যাঞ্চলীয় নিপ্রো ও ক্রেমেনচুক, দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিজিয়া এবং পূর্বের খারকিভ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে ইউক্রেইনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এসব ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ, ভূমি ও সাগর থেকে ছোড়া হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো স্থাপনায় ‘সন্ত্রাসী’ হামলার পর তিনি দীর্ঘ পাল্লার ‘ব্যাপক’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে, হামলাটি যেমন ব্যাপক মাত্রার ছিল তাতে এটি দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করা হয়ে থাকতে পারে।
সোমবার হামলার পর ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাইডেনের সঙ্গে আলাপের পর জেলেনস্কি টেলিগ্রামে করা এক পোস্টে লিখেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ১ নম্বর অগ্রাধিকার বিমান প্রতিরক্ষা।”
এরপর রাতে দেওয়া টেলিভিশন বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করতে সবকিছু করবো আমরা। যুদ্ধক্ষেত্রকে শত্রুর জন্য আরও যন্ত্রণাদায়ক করে তুলবো আমরা।”
বাইডেন জেলনস্কিকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেম সরবরাহ করবে।
২৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন জানিয়েছিল, তারা পরবর্তী দুই মাস বা ওই রকম সময়ের মধ্যে ‘ন্যাশনাল অ্যাডভান্স সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম’ সরবরাহ শুরু করবে।
ইউক্রেইনের জরুরি বিভাগ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশজুড়ে মোট ১৪ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, লোকজনকে হত্যা ও ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ গ্রিড অকার্যকর করে দেওয়ার জন্য দিনের ব্যস্ত সময়ে হামলাগুলো চালানো হয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী সুমাইহাইল জানিয়েছেন, আটটি অঞ্চলের ১১টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা হওয়ায় ইউক্রেইনের বহু অঞ্চল বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে, এতে পানি সরবরাহ ও ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বিদ্যুৎ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় ইউক্রেইন ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ রাখে। এটি এমন এক সময়ে ঘটে যখন ইউরোপজুড়ে বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে এবং এর দাম বেড়ে চলছে আর এতে মহাদেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি, শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত ও ভোক্তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় আকাশছোঁয়া হয়ে উঠছে।