বাংলাদেশে সরকার ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে 'গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো' বলে ঘোষণা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
দোসরা অক্টোবর এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশের সরকার।
সেখানে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি ধারা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের 'গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো' বলে ঘোষণা করা হলো। খবর বিবিসি বাংলার।
কিন্তু এর মাধ্যমে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে?
বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের তথ্য সুরক্ষার ওপর জোর দিতেই এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০১৮ সালে জারি করা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে একটি ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি গেজেটের মাধ্যমে সরকার কোন কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা তথ্য পরিকাঠামোকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসাবে ঘোষণা করতে পারবে।
বাংলাদেশ ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক মোঃ খায়রুল আমীন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এর মাধ্যমে আসলে এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য সুরক্ষায় জোর দেয়া হয়েছে।
তিনি বলছেন, ''এগুলো হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এদের যদি কোন তথ্য চুরি হয়ে যায়, সেখানে কোন ধরনের অনুপ্রবেশ হলে মানুষের ওপর অবশ্যই প্রভাব পড়ে। এই কারণে তাদের তথ্যগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সেজন্য তারা যাতে আন্তর্জাতিক বেস্ট প্রাকটিস ফলো করে, তথ্য সুরক্ষায় যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।''
তিনি জানান, এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির একটি গাইডলাইন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেই গাইডলাইন অনুসরণ করে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
''এটার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সুরক্ষিত থাকে। যাতে তার তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা, নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মানব সম্পদ- এগুলোর ক্ষেত্রে যেন সে একটি স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করে। যাতে করে তারা কোন রকম ভালনারেবিলিটির শিকার না হয় বা হ্যাকিং না হয়। মূল বিষয় হলো, এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেন কোনভাবে আক্রান্ত না হয়।''
যেসব প্রতিষ্ঠানকে 'গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো' ঘোষণা করা হয়েছে
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড, সেতু বিভাগ, ডাটা সেন্টার কোম্পানি, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ, বিটিআরসি, পরিচয়পত্র বিভাগ, সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালি ব্যাংক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইমিগ্রেশন, বিটিসিএল, তিতাস, পাওয়ার গ্রিড, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি, সিভিল এভিয়েশন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিমালা অনুযায়ী, তথ্য ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, নেটওয়ার্ক, সেবা -ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে 'গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো' যাচাই করে থাকে এজেন্সি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি যদি বেআইনি অনুপ্রবেশ করে ক্ষতি বা বিনষ্ট করেন, তাহলে সাত বছরের কারাদণ্ডসহ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলছেন, ''এর আগে আমরা রাষ্ট্রের গুরুত্ব কিছু প্রতিষ্ঠানকে কেপিআই ঘোষণা করতে দেখেছি। যার মাধ্যমে সেগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু 'গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো' ঘোষণা করার ব্যাপারটি আমাদের কাছে একেবারেই নতুন।''
সাংবাদিকতায় বাধা আসতে পারে?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জারি করার পর থেকেই সেটি সাংবাদিকতার জন্য বড় বাধা তৈরি করছে বলে গণমাধ্যম সম্পাদকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তথ্য ও মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন বলেছে, গত চার বছরে ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমনে এই আইনের নজিরবিহীন অপপ্রয়োগ হয়েছে। আর্টিক্যাল নাইনটিন শুধু ২০২১ সালের উদাহরণ দিয়ে বলেছে, ওই বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাংলাদেশে যত মামলা হয়েছে, তার মধ্যে ৪০ শতাংশ মামলাই হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে কটূক্তির কারণে।
ফলে সেই আইনের আওতায় এই 'গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিদপ্তর' ঘোষণা সাংবাদিকতায় কোন বাধা তৈরি করবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুমন আহমেদ সাবির। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবাদিকরা নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। ফলে এই ঘোষণার ফলে তাদের সংগ্রহ সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
''যদিও বিষয়টি একেবারে নতুন। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান পাবলিক প্রতিষ্ঠান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেবা নেন। ফলে এটা ঘোষণার পর সেখানে সাংবাদিকতায় বা সংবাদের তথ্য সংগ্রহে বাধা তৈরি করবে কিনা, সেটা নিয়ে একটা উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। তবে সেটা বুঝতেও আরও কয়েকদিন সময় লাগবে,'' তিনি বলছেন।