সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী অস্থিরতায় দোষী সাব্যস্ত এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা জানিয়েছে ইরান।
বিপ্লবী আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে মোহসেন শেকারির ফাঁসি কার্যকর করা হয় বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দাঙ্গাকারী হিসেবে সেপ্টেম্বরে তেহরানের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে বড় ছোরা দিয়ে আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে আঘাত করেছিলেন।
“যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই লোকদেখানো বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়,” বলেছেন ইরানের এক আন্দোলনকারী।
নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দেম টুইটারে লিখেছেন, ইরানের কর্তৃপক্ষ যদি শিগগিরই কার্যকর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি না হয়, তাহলে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চলতেই থাকবে।
ইরানের বিচারবিভাগ সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহসেন শেকারি গত ২৫ সেপ্টেম্বর তেহরানের সাত্তার খান সড়ক অবরোধ করে রাখার পাশাপাশি বাসিজ রেসিস্ট্যান্স ফোর্সের এক সদস্যের উপর হামলায় একটি বড় ছোরাও ব্যবহার করেছিল বলে জানায় ইরানের বিপ্লবী আদালত।
স্বেচ্ছাসেবী আধাসামরিক বাহিনী বাসিজকে ইরানের কর্তৃপক্ষ প্রায়ই বিক্ষোভ দমনে কাজে লাগায়।
গত ১ নভেম্বর আদালত ‘হত্যা, সন্ত্রাস সৃষ্টি এবং সমাজের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার’ উদ্দেশ্যে অস্ত্র ব্যবহারের দায়ে শেকারিকে ‘ইশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতায়’ দোষী সাব্যস্ত করে বলে জানায় মিজান।
শেকারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সুপ্রিম কোর্ট গত ২০ নভেম্বর তা খারিজ করে দেয়।
ইরানের বিচারবিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেশটির বিপ্লবী আদালতগুলো এখন পর্যন্ত সরকারবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত আরও ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। অভিযুক্তদের পরিচয় জানায়নি তারা।
গণআন্দোলনকে দমাতে এবং মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকাতেই এসব মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে বলে ভাষ্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের।
দেশটিতে নারীদের জন্য থাকা কঠোর পোশাকবিধি ঠিকঠাক না মানার অভিযোগে আটক ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনি নীতি পুলিশের হেফাজতে মারা গেলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ইরানজুড়ে মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়।
নারীদের নেতৃত্বাধীন এসব বিক্ষোভ ইরানের ৩১টি প্রদেশের ১৬০টি শহরে ছড়িয়ে পড়ে, যা ১৯৭৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্রে পরিণত হওয়া দেশটির শাসকদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
ইরানের নেতারা সরকারবিরোধী এ বিক্ষোভকে ‘দাঙ্গা’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর জন্য ‘বিদেশি শত্রুদের’ দায় দিয়েছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ‘কঠোর হস্তে দমনে’ নির্দেশ দিয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্ট নিউজ এজেন্সির (এইচআরএএনএ) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৪৭৫ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে, আটক হয়েছেন ১৮ হাজার ২৪০ জন।
বিক্ষোভ সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর ৬১ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।