দেশে আরও দুইজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়ে আইডিসিআর বলছে, সব জেলা এখন নিপা ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ; আর যেগুলোতে রোগী শনাক্ত হয়েছে সেগুলোতে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইডিসিআর এর সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি শীত মৌসুমে দেশের সাত জেলায় ১০ জনের শরীরে বাদুরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস ধরা পড়েছে; যাদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার রাতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাতজন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর আগে ২৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আক্রান্ত আটজনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিলেন।
এ নিয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৫ জন, যাদের মধ্যে ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আইইডিসিআর বলছে, দেশের সবগুলো জেলাই এখন নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে। তবে ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৩টি জেলায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে বাদুড়ের মাধ্যমে নিপা ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়ায়। কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার মাধ্যমেই মূলত এটি ছড়িয়ে পড়ে। টিকা না থাকায় এ রোগ থেকে দূরে থাকার একমাত্র উপায় হিসেবে কাঁচা খেজুরের রস পান না করা, পাখি বা বাদুরে খাওয়া ফল না খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো জায়গায় একবার নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ওই স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।
“কারণ যেখানে নিপা ভাইরাসের রোগী পাওয়া যায় সেখানে বাদুরও থেকে যায়, খেজুরের রসও থাকে। দেশের সব এলাকাই নিপা ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু সেসব জেলায় পাওয়া গেছে সেসব জেলায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।”
আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, ২০০১ সালে পশ্চিমের মেহেরপুর জেলায় প্রথম নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। সে বছর ওই জেলায় ১৩ জন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৯ জনের।
এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৬ সাল বাদে প্রতিবছরই বিভিন্ন জেলায় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০০৪ সালে; মারা যান ৫০ জন। এছাড়া ২০১১ সালে ৪৩ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয় ৩৭ জনের। ২০১৪ সালে ৩৭ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যান ১৬ জন।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদ্প্তর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনের কাছে এক চিঠিতে নিপা ভাইরাসজনিত জ্বরের ঝুঁকির কথা জানায়। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।