Loading...
The Financial Express

সখী, ভালোবাসা কারে কয়?

| Updated: February 15, 2023 21:49:08


সখী, ভালোবাসা কারে কয়?

চার অক্ষরের একটি শব্দ, তবে অনুভূতির ব্যাপ্তিটা তার চেয়ে বহুগুণ। আর সে ব্যাপ্তিতে জড়িয়ে থাকে জগতের মানবমনের সবটা মানচিত্র। ব্যবহারিক জীবনের পথে এগিয়ে যাবার জন্য যতই ইঁদুরদৌড়ে ছুটতে থাকি না কেন, দিনশেষে মাথা রাখার বা মনের দুটো কথা বলতে পারার জন্য দ্বারস্থ হতে হয় আবেগী সত্তার কাছেই।

মানবীয় আবেগের জমিতে এক উর্বরী ফসল যেন ভালোবাসা। বহুদিন আগের দেখা– বিটিভির বাংলা নাটকে শোনা সংলাপ মনে পড়ে যায়, ‘ভালোবাসা হলো কাঁচা সবজির মতো, নষ্ট হয়ে যায়! এই জন্য ভালোবাসা বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে হয়। বুক ঠান্ডা ফ্রিজের মতো। এইখানে কোনোকিছু নষ্ট হয় না। যার বুক যত ঠান্ডা, তার বুকে ততদিন ভালোবাসা থাকে!’ শীতল হৃদয়ের উষ্ণতম পরশ ভালোবাসা। বিবিধ সংজ্ঞায়ন আর অভিব্যক্তি-অভিজ্ঞতা ঝোলা পূর্ণ হলেও ভালোবাসার স্বরূপ একেকজনের কাছে আসে একেকভাবে। রবি ঠাকুরের সেই গানের মতোই গালে দু’ হাত দিয়ে তাই মাঝে মাঝে ভাবতে বসতে হয়, ‘সখী, ভালোবাসা কারে কয়?’

নচিকেতা যতই ‘ভালোবাসা আসলেতে একটা চুক্তি যেন, অনুভূতি-টনুভূতি মিথ্যে’ বলে মঞ্চ কাঁপান না কেন, ভালোবাসার চাহিদা বা আবেদন খুব একটা কমে না। এমনকি যারা গানটা প্লেলিস্টের শুরুতে রাখেন, ভালোবাসা তাদেরকেও ছুঁয়ে গেছে, হয়তো মন ভরে দিয়েছে ‘গত বর্ষার সুবাস’।

ভালোবাসা বারবার আসে গল্পে-গানে-কবিতায়, সিনেমার পর্দায়; ঘুরেফিরে উৎসুক চোখের চাহনিতে, প্রেমিক মনের কাঁপুনিতে। ভালোবাসা মাঝে মাঝে আটপৌরে, ঘরদোরে ঘুরে বেড়ায়, জুতো পরতেও ভুলে যায়। ভালোবাসা উঠোনে বসে রোদ পোহায়, ভাতঘুমে হাই তোলে– আড়মোড়া ভাঙে অলস চোখে। এমন ভালোবাসাকে নিজের করে নিতে জানেন একমাত্রা সোসাইটির ডোনার কম্যুনিকেশন অফিসার সুমাইয়া জাহিদ, “আমার কাছে ভালোবাসা মানে শান্তি। ওই যে কবিতাটা আছে না, যার কাছে যার শান্তি মিলে, তার কাছে তার ঠাঁই মিলুক? আমার কাছে ভালোবাসা ব্যাপারটা ওমন৷ পেটের ভেতর প্রজাপতি উড়বে, একই সাথে মনের ভেতর শান্তির ঝর্ণা বইবে।”

কখনো কখনো আবার দেখা যায় ভালোবাসার বিশেষ রূপ, আয়নায় তার প্রতিফলনে যেন চোখ ঝলসে যায়। যেন যত্ন করে শিকেয় তুলে রাখা এক আঁজলা মিঠে পানি, যেন মরুভূমিতে দেখে ফেলা এক বিন্দু মরীচিকা। ভীরু চাহনিতে ভালোবাসায় তখন আওড়ে উঠতে ভালো লাগে, ‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ’। ভালোবাসায় অকর্মা হতেও বেশ লাগে, মীর্জা গালিবও তাই ভাবতেন। আলগোছে তাইতো বলে দিতে পেরেছিলেন, ‘ইশক নে গালিব নিকম্মা কার দিয়া, ওয়ারনা আদমি হাম ভি থে কাম কে।’

প্রকাশেই যদিবা প্রণয়ের পরিণয়, অনেক ভালোবাসা থেকে যায় মনের কুঠুরিতে সুপ্ত। সেই সুপ্ত ভালোবাসা কবি আবুল হাসানের কলমে এসে হয়ে যায় আরেকটা নতুন কবিতা না লেখার কারণ, কিংবা আরেকটা কবিতাই–
‘তোমাকে ভালোবাসি তাই ভালোবাসার কবিতা লিখিনি–

আমার ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো কবিতা সফল হয়নি।

আমার এক ফোঁটা হাহাকার থেকে

এক লক্ষ-কোটি ভালোবাসার কবিতার জন্ম হয়েছে।’


ভালোবেসেও অনেকে ভালোবাসার কথা বলতে পারেন না। হয়তো শব্দ-বাক্যে অনুভূতিটাকেই ধরতে জানেন না, তাতে অবশ্য ভালোবাসার ভাণ্ডারে কোনো টান পড়ে না। গনগনে রোদে হাতিরপুল কাঁচাবাজারে বরই বিক্রেতা রাশেদের কথা শুনেও তাই মনে হলো। ‘ভালোবাসা কী, এইটা নিয়ে তো ভাবি নাই কখনো।’ ‘তা নাহয় ভাবেননি, কিন্তু কাউকে ভালো কি বাসেন না, আপনার স্ত্রীকে?’ লজ্জামিশ্রিত এক মুচকি হাসি হেসে তিনি বললেন, ‘তা তো বাসিই!’ আরো খদ্দের চলে এলো। সকল সংজ্ঞায়নের প্রয়োজন ছাড়িয়ে ভালোবাসা কাঁচাপাকা বরইয়ের মতো ভ্যানের উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রইলো।

অনিন্দিতা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সম্প্রতি মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। [email protected]

Share if you like

Filter By Topic