সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে প্রকাশিত নবম ওয়েজ বোর্ডে আয়কর ও আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।
এর ফলে আগের মতই সংবাদকর্মীর আয়কর দেবে সংবাদমাধ্যমের মালিকপক্ষ। আগের মতই বছরে মূল বেতনের সমান দুটি আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) প্রাপ্য হবেন সংবাদকর্মীরা।
এ বিষয়ে দুই বছর আগে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রায় দেয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কাজী আকতার হামিদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী দিদারুল আলম দিদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন।
দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয়।
২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে বোর্ডের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
এর ওপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টম্বর নবম ওয়েজ বোর্ডের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে সরকার। তবে এখনও কোনো সংবাদমাধ্যমই নতুন ওই বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করেনি।
নবম মজুরি বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে,
>> সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বেতনের উপর আরোপিত আয়কর সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসিনক কর্মচারীগণ কর্তৃক তাদের নিজ নিজ আয় হতে প্রদান করতে হবে।
>> সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণ প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) হিসেবে প্রপ্য হবেন।
আগের ওয়েজবোর্ডগুলোতে সংবাদকর্মীদের আয়কর সংবাদমাধ্যম কর্তৃপক্ষের দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। আর সংবাদকর্মীরা বছরে দুটি আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) পেতেন। কিন্তু মন্ত্রী সভা কমিটির সুপারিশে নবম ওয়েজবোর্ডে ওই নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়।
মন্ত্রী সভা কমিটির ওই সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করেন ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উজ্জামান।
এরপর একই বছরের ২৫ নভেম্বর প্রাথমিক শুনাশি শেষে রুল জারি করে হাই কোর্ট। নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের দ্বাদশ অধ্যায়ে সংযুক্ত সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের আয়কর ও আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) সংক্রান্ত বিধান কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্য সচিব ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
ওই রুলের ওপর বেশ কয়েক দিন শুনানি শেষে রোববার মন্ত্রী সভা কমিটির দুটি সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিল হাই কোর্ট।