পাঠ্যপুস্তকের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।
শুক্রবার এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তবে কী কারণে বই দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে এনসিটিবি কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
এতে বলা হয়েছে, “২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি পাঠদান হতে প্রত্যাহার করা হল।
এতে আরও বলা হয়েছে, “উক্ত শ্রেণিদ্বয়ের জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক সমূহের কতিপয় অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।
“উক্ত পাঠ্যপুস্তকসমূহের অন্যান্য সকল অধ্যায়ের পাঠদান অব্যাহত থাকবে। সংশোধনীসমূহ শিগগির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অবহিত করা হবে।”
এদিকে এদিন দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ দুটি বই পড়ানো বন্ধের কথা জানান।
নীলকমল ইউনিয়নের ইশানবালা কাশেম উলমুল মাদ্রাসা মাঠে উঠান বৈঠকে তিনি এর বলেন, “অনেকেই বলছেন, কিছু জিনিস না থাকলেই ঠিক হইত বা এইটা অনেক বেশি লিখছে। আমরা বলছি, ঠিক আছে, নতুন বই আবার আমরা তৈরি করে দেব।”
দীপু মনি আরও বলেন, “আগামী বছর নতুন বানাইয়া দেব। ক্লাস সিক্সে একটা নতুন বানায় দেব, ক্লাস সেভেনে একটা নতুন বানায় দেব। সিক্সের একটা বই, সেভেনের একটা বই। ওই বিষয়ের দুইটা বই। একটা বই আপাতত
পড়া বন্ধ থাকবে। ওইটা দরকার নাই পড়ার।”
পাঠ্যপুস্তকের ভুল নিয়ে ‘প্রগতিবিরোধী অপশক্তি উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে মিথ্যাচার করছে’ এমন অভিযোগ করে এর আগেও দীপু মনি বলেছেন, কেউ যদি গঠনমূলকভাবে পরামর্শ দেয় তাহলে মন্ত্রণালয় সেটি গ্রহণ করবে।
এক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তকের রচনার সঙ্গে জড়িত লেখক, শিক্ষক, যেসব শিক্ষাবিদ-বিশেষজ্ঞরা জড়িত ছিলেন তাদেরকে ‘কদর্য ভাষায়, কুৎসিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার বলেন, “ধর্ম একটা পবিত্র জিনিস। এইটা নিয়ে কি কেউ মিথ্যা কথা বলে? যারা এই মিথ্যাচার করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। বইয়ে কী আছে নিজেরা পড়ে দেখবেন। তারপরও আমরা কিছু কিছু ঠিক করছি।“
“বইয়ে ইসলামবিরোধী কিছু নেই। তারপরও আমরা মানুষের কথা শুনি। মানুষের মনে কষ্ট লাগলে, দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলে আমরা সেইটারে জায়গা দিতে চাই। সেইটারেও সম্মান দিতে চাই। যে মিথ্যাচার করছে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না।”
“নৌকার যারা কর্মী, আওয়ামী লীগের যারা কর্মী তারা কখনও ইসলামবিরোধী কোনো কাজ করতে পারে না।”
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েরসাইটে গিয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সিলেবাস পাওয়া যাচ্ছে।
সেখানে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক তালিকায় রয়েছে- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ, বিজ্ঞান অনুশীলন বই, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বই, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবীকা, শিল্প ও সংস্কৃতি, ইসলাম শিক্ষা, হিন্দুধর্ম শিক্ষা, খিস্ট্রধর্ম শিক্ষা ও বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা।
হাইমচর উপজেলার অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এ এইচ এম আহসান উল্লাহ, জেলা পরিষদের সদস্য খোরশেদ আলম।