Loading...
The Financial Express

শৈশব স্মৃতিময় বিটিভির কার্টুন

| Updated: September 12, 2022 15:57:21


শৈশব স্মৃতিময় বিটিভির কার্টুন

মায়ের গন্ধের আদরে মাখা গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতের দুপুর। দুপুরের আহার শেষে আদরের সন্তানদের নিয়ে একটু দিবানিদ্রা দেয়ার ব্যাপারটি বুঝি সকল মায়েদের কাছেই প্রিয়। সেটি হোক অতীতকিংবা বর্তমান, কোনোকালেই এর ব্যতিক্রম দেখা যায়না।

তবে মায়ের দুষ্টু ছানাদেরকাছে ঘুমের থেকে বেশি যে জিনিসটি প্রিয় সেটি হচ্ছে কার্টুন। বর্তমান সময়ে কার্টুনের জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা চ্যানেল। সেইসব চ্যানেলে সারাদিন ধরে দেখানো হয় বিভিন্ন ধরনের কার্টুন।

কিন্তু নব্বইয়ের দশকে একটা চ্যানেলেই কার্টুন দেখানো হতো - সেটি হচ্ছে বিটিভি। আর বেশিরভাগ কার্টুনই দুপুরের পর থেকে শুরু হতো। তাই দুপুরের খাবার শেষে মায়ের সাথে বিশ্রাম না নিয়ে কখন কার্টুন দেখতে বসা যাবে সেই চিন্তাই বাচ্চাদের মনে ঘুরপাক খেতো।

মীনা

"দুপুরের খাবার শেষে মা ঘুমিয়ে গেলে চুপটি করে মায়ের পাশ থেকে উঠে যেতাম। টিভির আওয়াজ কমিয়ে এনে বিটিভি চ্যানেলটা চালু করতাম। কারণ তখন শুধু এই চ্যানেলটাই ছিল। এরপর আবার এসে মায়ের পাশে শুয়ে একচোখ খোলা আরেক চোখ বন্ধ রেখে মীনা কার্টুন দেখতাম। মায়ের কাছে যেনো ধরা না পড়ে যাই, সেই ভয়ে এই বুদ্ধি খাটিয়ে কার্টুন দেখতাম"

কার্টুন নিয়ে নিজের শৈশব স্মৃতি এভাবেই রোমন্থন করছিলেন সুমাইয়া আরেফিন অর্ণি।তিনি যোগাযোগ সহযোগী হিসেবে কর্মরত আছেন ব্র্যাকএনজিওতে।

মীনা কার্টুন নিয়ে ডা. তাসমিয়া রহমানের শৈশব স্মৃতি কিছুটা ভিন্ন। কার্টুন দেখা নিয়ে কখনও মায়ের কাছ থেকে তেমন বকুনি খেতে হয়নি।

ডা. তাসমিয়ার ভাষ্যে, “নানুবাড়িতে গিয়ে যখন সবাই দল বেঁধে মীনা কার্টুন দেখতে বসতাম তখন পুরো পৃথিবীটা অন্যরকম লাগতো। মীনার সেই জ্বীন দেখে মনে হতো, আমিও বুঝি একদিন এমন প্রদীপ পাবো আর সেটা থেকে বেরিয়া আসা জ্বীন আমার মনোবাসনা পূরণ করবে।”

আমাদের ছোটবেলার নির্মল বিনোদনের উৎস ছিলো এই মীনা কার্টুন। ১৯৯৩ সালে সর্বপ্রথম এটি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়।প্রথমে মীনার ১৩ পর্ব বানানো হয় ও প্রচার করা হয় সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

শুধু বাংলা ভাষা নয়, বাংলা ও হিন্দি ভাষাসহ ২৯ টি ভাষায় তৈরি হয় মীনা কার্টুন।দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের লক্ষ্যে ইউনিসেফ এই কার্টুনটি তৈরির উদ্যোগ নেয়।

বাল্যবিবাহ রোধ, ছেলে-মেয়েদের সমানাধিকার প্রদান, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার তৈরি ও ব্যবহার, যৌতুক দেওয়া-নেওয়া বন্ধ করা, মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মীনা কার্টুনের আধেয় সাজানোর মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালানো হয়।

গডজিলা দ্যা সিরিজ

মঙ্গলবার বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে নাওয়া - খাওয়া ছেড়ে বিটিভি চ্যানেলটি চালিয়ে টেলিভিশন এর সামনে বসে যাওয়া।উদ্দেশ্য গডজিলা দ্যা সিরিজ কার্টুনটি দেখা। হলিউডের গডজিলা ছবির অনুকরণে সিরিজটি দেখানো শুরু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে।     

প্রাগৈতিহাসিক যুগের ড্রাগনের মতো বিশালদেহী প্রাণী, যেটি গভীর সমুদ্রের তলদেশে ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু যখনই মানবজাতি বিপদে পড়তো তখনই সে বেড়িয়ে আসতো। এবং বিজ্ঞানীদের সাথে বিপদ কাটাতে সাহায্য করতো। সে প্রাণীটির নামই গডজিলা।

বিজ্ঞানী নিক এবং তার সঙ্গীদের পাশাপাশি গডজিলা কিভাবে মানবজাতির বিপদের মুহূর্তে রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ায় সেই কাহিনীকে কেন্দ্র করেই মূলত কার্টুনটি তৈরি করা হয়েছে।

তবে এসব চরিত্র ছাড়াও পার্শ্ব চরিত্রে একজন নারী সাংবাদিককে দেখা যায়। মূল চরিত্র নয় বরং সেই পার্শ্ব চরিত্রের সাংবাদিকের জন্যই ছোটবেলায় কার্টুনটি দেখতেন উত্তরা নিবাসী মোঃ মিরাজ হোসেন।

তিনি বলেন,'পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেনো ঘটনাস্থল থেকে খবর প্রচারের ক্ষেত্রে সে কখনো ই পিছপা হয়নি। আর এই বিষয়টি ই আমাকে বেশি আকর্ষণ করতো'।

কার্টুনের এই চরিত্রের প্রতি আকর্ষণের জেরেই হোক কিংবা ভাগ্যের বদৌলতে, বড় হয়ে সেই সাংবাদিকতার উপরেই সম্পন্ন করেছেন স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর।

মজার মজার গল্প

বুধবার বিকেল ৫ টা, আর বাকি ৬টা  বিকেলের মতো এই দিনের বিকেল নয়। বুধবারের এই বিকেলটা একটু আলাদা। কারণ বুধবার বিকেল ঠিক ৫ টায় বিটিভির পর্দায় দেখানো হতো মজার মজার গল্প নামক কার্টুনটি।

শাকচুন্নীর গল্প, বানরের গল্প, রাক্ষসের গল্প নিয়ে সাজানো হতো রোজকারের গল্পগুলো। অন্যান্যদিনে বিকেল বেলা খেলাধূলো করলেও বুধবারের এই বিকেলটা সহচরীদের নিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় মন দিতেন চাঁদপুর নিবাসী মুক্তা।

পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে মুক্তা বলেন, 'বুধবারের বিকেলের জন্য পড়া ও খেলাধূলো  কিছুই ফেলে রাখতাম না। কারণ বুধবারের বিকেলটা তোলা রাখতাম মজার মজার গল্প কার্টুনের জন্য'।

বিটিভির কার্টুনগুলো আমাদের শৈশবের দিনগুলোকে করেছে আরো রঙিন। কার্টুনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এসব স্মৃতি আমাদের জীবনকে করে তোলে প্রাণবন্ত।

 ফারজানা জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

[email protected]

 

 

Share if you like

Filter By Topic