রাজধানীর কদমতলী এলাকায় সাত বছর আগে ৭ বছরের শিশু আব্দুল্লাহকে হত্যার দায়ে এক আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলম রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
দণ্ডিতরা হলেন– মো. হানিফ ও জাহিদ হোসেন। তারা দুজনেই পলাতক।
তাদের মধ্যে হানিফকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
আর জাহিদ হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে পাঁচ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ নাজমুল হুদা রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। যেহেতু মামলার ১ নম্বর আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা তার সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছিলাম।
“প্রত্যাশিত রায় পাইনি, তাই আমরা উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।”
নিহত আব্দুল্লাহর মা আয়েশা আক্তার রায়ের পর বলেন, “আমার সাত বছরের ছেলে আব্দুল্লাহকে পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে হানিফ আর জাহিদ।
আমি ছয় বছর ধরে আদালতে আসি আমার ছেলে হত্যার বিচারের আশায়। তারা এই মামলায় জামিন পেয়ে আমাকে ও আমার স্বামীকে অনেক ভয়ভীতি দেখিয়েছে। শেষমেশ টাকার বিনিময়ে আপস করতে চেয়েছে। আমি আপস করিনি।
“এই রায়ে আমি খুশি। কিন্তু আসামিরা বাইরে, তাই আমি আমার পরিবার নিয়ে ভীতির মধ্যে রয়েছি।”
মামলার বিবরণে জানা যায়, শ্যামপুরের আলীবহর এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া ও আয়েশা বেগমের সন্তান আবদুল্লাহ ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।
পরে কদমতলীর বন্ধ উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির সীমানার ভেতরে কাদা-পানির মধ্যে তার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। সে সময় তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলানো ছিল।
আবদুল্লাহর বাবা মোস্তফা মিয়া স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের গাড়ি চালক। আর মা আয়েশা বেগম স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে কাজ করতেন। ছেলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় কদমতলী থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন তারা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার কিছুদিন আগে স্থানীয় বাসিন্দা হানিফের গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয় শিশু আবদুল্লাহ। এর জেরে মোস্তফার সঙ্গে হানিফের ঝগড়া হয়। ওই ঘটনায় মোস্তফা পঞ্চায়েতে বিচার দিলে হানিফ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন।
এর কিছুদিন পর একই ঘটনায় হানিফের সঙ্গে আয়েশারও ঝগড়া হয়, তাকেও হানিফ হুমকি দেন। ওই শত্রুতার জেরে তাদের ছেলেকে হত্যা করা হয়।
আসামিরা সাত বছর বয়সী আব্দুল্লাহকে উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ভেতরে নিয়ে যায় এবং সেখানে পাথর দিয়ে মাথায় ও মুখে আঘাত করে তাকে হত্যা করে। পরে সেখানে লাশ ফেলে রেখে তারা চলে যায়।
তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি হানিফ ও জাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক এরশাদ হোসেন। এরপর ২০১৮ সালের ১১ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় বিচারক।
বাদীপক্ষে মোট ১২ জনের সাক্ষ্য শুনে রোববার দুই আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিল।