Loading...
The Financial Express

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদিন বন্ধের সুযোগে রমরমা কোচিং বাণিজ্য

| Updated: September 11, 2022 09:40:53


নগরীর একটি কোচিং সেন্টারের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে চলছে পাঠদান নগরীর একটি কোচিং সেন্টারের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে চলছে পাঠদান

বিদ্যুতে সাশ্রয়ী হওয়ার লক্ষ্যে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুক্র ও শনিবার বন্ধসহ কর্মক্ষেত্রের সময়সীমা কমিয়ে আনলেও ময়মনসিংহে পাঠকক্ষে লাইট-এসি-ফ্যান লাগিয়ে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব কোচিং সেন্টারে চলে পাঠদান। শিক্ষাবিদ ও নাগরিক নেতারা বলছেন, যাদের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই, তারা সরকারের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটাতে পারে না।

এক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর হওয়া দরকার বলে মনে করেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরীসহ পুরো জেলায় কয়েকশ কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ কোচিং-ই ময়মনসিংহ শহরে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও সকাল থেকে নগরীর কোচিং সেন্টারখ্যাত নাহার রোড, বাউন্ডারি রোড, পিয়নপাড়া, জিলা স্কুল রোড়, গুলকীবাড়ি, কালিবাড়ি, সানকিপাড়া, এবি গুহ রোড এবং নতুন বাজার এলাকায় কোচিং সেন্টারগুলো তাদের কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়।

এসব কোচিং পরিচালনায় স্থানীয় কয়েকটি বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকও রয়েছেন।

তাদের পরিচালিত প্রায় সবকটি কোচিং সেন্টারে লাইট-ফ্যানের পাশাপাশি আছে একাধিক এসিও।

এসব কোচিং-এর শিক্ষকরা বলছেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও কোচিং সেন্টার বন্ধের ঘোষণা না দেওয়ায় তারা এগুলো চালু রেখেছেন। শিক্ষার্থীরা বলছে, স্কুল বন্ধ থাকায় কোচিং-এ তারা বেশি সময় ব্যয় করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর বাউন্ডারি রোডে কণিকা ক্যাডেট অ্যাকাডেমিতে ক্লাস-পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষায় কম করে হলেও ৬০ থেকে ৭০ জনের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। এ কোচিং শুক্র-শনি দিনভর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়।

পরিচালক মাহবুবু আলম এ প্রতিবেদকের কাছে তার প্রতিষ্ঠানের নানা সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও কোচিং স্টোরের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকায় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন।

তবে সরকার কোচিং বন্ধের নির্দেশনা দিলে তা পালন করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

একই রোডের নাঈম স্যারের সৃজনশীল বিজ্ঞান অঙ্গনে গিয়ে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার কবির তূর্যয় জানায়, রাস্তার পাশে হওয়ায় জানালা খোলা থাকলে ভেতরে ধূলাবালি আসে। তাই স্যার রুমে এসি লাগিয়ে জানালা একেবারে বন্ধ করে দিছেন, তা আর খোলা হয় না। ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে বসে ক্লাস করতে হয়। এখানে ফ্যান এবং এসি ছাড়া কোনোভাবেই ক্লাস করা সম্ভব নয়।

কোচিংটির পরিচালক নাঈম আহম্মেদের ভাষ্য, “শিক্ষার্থীরা এখন আরাম প্রিয়। তারা এসি ছাড়া ক্লাস করতে চায় না। সবকটি কোচিং সেন্টারে এসি আছে। শিক্ষার্থী ধরে রাখতে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেখাতে হয়।”

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দুইদিন বন্ধ রাখায় তারাও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়েছেন জানালেও কীভাবে তারা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছেন সে ব্যাখ্যা দেননি।

ক্লাসের ছবি তুলতে গেলে উত্তপ্ত হয়ে মোখলেসুর রহমান নামে এক শিক্ষক বলেন, “সাংবাদিকদের জন্য আমাদের সমস্যা হয়। আপনারা অনেক বেশি লেখালেখি করেন; এসব ভালো না। আমাদের কোচিং চলছে চলবে। পারলে গিয়ে কিছু করে দেখান।”

ইউনিক টিচিং হোমের পরিচালক গোলাম মোর্শেদ বলেন, “করোনার দুই বছর পকেট থেকে ভরে বাসা ভাড়া দিতে হয়েছে। এখন যদি সপ্তাহে দুইদিন কোচিং সেন্টার বন্ধ করে রাখতে হয়, তাহলে না খেয়ে মারা যাব। দুইদিন পর পর কোচিং সেন্টার বন্ধ, তা আমাদের জন্য বিব্রতকর। সরকার এ বিষয়ে নীতিমালা করে দিলে ভালো হয়।”

কোচিংয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, “আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছি। সপ্তাহে পাঁচদিন ক্লাসের পর দুই দিন পরীক্ষায় বোঝা যায় আমার ছেলে-মেয়ে কতটুকু ভালো করছে। আমার দৃষ্টিতে কোচিংয়ে তেমন বিদ্যুৎ খরচ হয় না। কারণ আমরা ঘরে ফ্যান-লাইট বন্ধ করেই ছেলে-মেয়েদের কোচিং-এ নিয়ে আসি।”

এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেলা জনউদ্যোগ-এর আহ্বায়ক আইনজীবী নজরুল ইসলাম চন্নু বলেন, “সরকার ভালোর জন্যই সপ্তাহে দুইদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটিকে আমাদের সবার স্বাগত জানানো উচিত। আমি মনে করি, কোচিং সেন্টারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতায় পড়ে। সুতরাং চালু রাখার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। এক্ষেত্রে প্রশাসন একটু কঠোর হলে সবার জন্য ভালো হয়।“

আনন্দমোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, “যাদের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, তারা এ সময়ে কোচিং চালিয়ে সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখাবে – এটা হতে পারে না। তাদের যদি কোচিং চালাতেই হয়, তাহলে এসি বন্ধের পাশাপাশি জেনারেটর চালিয়ে পাঠদান করাতে হবে। অন্যথায় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”

“কোচিং পরিচালনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে; সরকারের নির্দেশনা সবাইকে মানতে হবে,” বলেন জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামূল হক বলেন, “কোচিং সেন্টারের বিষয়টি আমরা দেখছি। সাধারণত রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। কোচিং সেন্টারের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Share if you like

Filter By Topic