শত বছর পুরানো যেসব চার্চ


মো: ইমরান | Published: December 25, 2022 17:08:34 | Updated: December 25, 2022 19:44:20


শত বছর পুরানো যেসব চার্চ

পুরান ঢাকার জনসন রোড দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে গাছের পাতার ফাঁকে উঁকি দেয় গির্জার সাদা দেয়াল, যে দেয়াল বহন করে হারিয়ে যাওয়া ঢাকার গল্প। এই গল্পে মিশে আছে একেকটি গির্জার কাহিনী।

ব্রিটিশ, আর্মেনীয় ও পর্তুগিজ আমলের ছাপ পাওয়া যায় গির্জার দেয়ালে, যিশুর চিত্রে কিংবা পরম আত্মীয়ের এপিটাফে। আজকের গল্প দেশে জুড়ে এসব গির্জা নিয়ে যেগুলো শতবর্ষ ধরে বেঁচে আছে বাংলার বুকে।  

সেইন্ট থমাস চার্চ, জনসন রোড

নাবিক ভাস্কো দা গামার অভিযান বা খ্রিস্টের বারোতম প্রজন্মের শিষ্য থমাসের ত্যাগ; অনেকের নামই আসবে বাংলাদেশে খ্রিস্টধর্ম আগমন তথা চার্চ নিমার্ণের নেপথ্যের গল্পে। এই গল্পের চিহ্ন বহন করছে ঢাকার সেইন্ট থমাস চার্চ। 




                                               à¦¬à§à¦°à¦¿à¦Ÿà¦¿à¦¶ পিরিয়ডের, সেইন্ট থমাস চার্চ, ছবি: বিং ডট কম

চার্চের নির্মাণকাল ১৯ শতক, বয়সে দুইশ বছর আগের। ১৮১৯ সালে শুরু এই চার্চের নির্মাণ শেষ হয় ১৮২১ সালে। এর তিন বছর পর কলকাতার বিশপ  রেগিনাল্ড হেবার এটির উদ্বোধন করেন।  

নির্মাণশৈলীর দিক থেকে গোথিক ধাঁচের। পাকিস্তান আমলে ১৯৫১ সাল থেকে এটি ঢাকার ক্যাথিড্রাল চার্জ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

অক্সফোর্ড মিশন চার্চ বরিশাল


বরিশালের জীবনানন্দ দাশ রোডের উপর অবস্থিত এই গির্জা এলাকাবাসীর কাছে লাল চার্চ  নামেও পরিচিত। 

এক বিশাল ফাঁপা হল এর মূল আকর্ষণ। একাধিক দরজারসহ ৪০টি বাঁকা আকৃতি প্রবেশ পথ রয়েছে এই গির্জার। সম্পূর্ণ লাল রঙের চার্চের ফ্লরিঙ্গে কলকাতা থেকে আগত মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া প্যালেস্টাইনের ব্যাথোরহাম থেকে  বিশাল আকৃতির ক্রুশ এনে স্থাপন করা হয়েছে এই চার্চে। 





অক্সফোর্ড মিশন চার্চ বরিশাল ছবি: পিন্টারেস্ট

১৯০৩ সালে ফ্রেডরিক টগলাস নামে একজন ইঞ্জিনিয়ার গির্জাটি নির্মাণ করেন যা এখনো টিকে আছে বরিশালে আর আকর্ষণ করে যাচ্ছে লাখ লাখ পর্যটকদের। 

আর্মেনিয়ান চার্চ, আরমানিটোলা

বরিশাল থেকে এবার লঞ্চে করে পুরান ঢাকার সদরঘাটে আসা যাক। সেখান থেকে রিকশায় করে আধ ঘন্টার মধ্যে যেতে হবে বাবুবাজার ব্রিজ। ব্রিজের সাথেই আরমানিটোলা যেখানে আছে প্রায় ৩০০ বছর পুরনো আর্মেনিয়ান চার্চ। 

আর্মেনীয় বণিক ও ধর্মযাজকদের হাতে স্থাপিত হয় এই গির্জা। ১৭৮১ সালে এটি নির্মিত হলেও এরও বহু আগে জায়গাটিতে ছিল ছোট্ট ঘর যেখানে খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা করতেন।

সতের শতকে, আর্মেনীয়রা লবণ, চামড়া ও পাটের ব্যবসা করতে ঢাকায় আসে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে। সময়ের সাথে আর্মেনীয়দের এখানে একটি গির্জার প্রয়োজন অনুভব করে। এজন্যেই পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ের এই অঞ্চলটির নাম হয় আরমানিটোলা এবং গির্জাটি আর্মেনিয়ান চার্চ হিসেবে পরিচিতি পায়।  





                                                    আর্মেনিয়ান চার্চ, আরমানিটোলা,ছবি: বিং ডট কম


চার্চটি সোনালী রঙের যার ভেতরের মূল হলে প্রার্থনা করা হয়। এই হলের একদম সামনে যিশুখ্রিস্টের ছবি দেখা যায়। ছবিটির বয়স প্রায় দুইশ বছর। গ্রিক নির্মাণশৈলীর এই চার্চটির আঙ্গিনায় অনেকগুলো কবর রয়েছে। সিপাহি বিপ্লব থেকে শুরু করে বিশ্বযুদ্ধ বিভিন্ন সংগ্রামে প্রাণ দেওয়া সৈন্য, এই অঞ্চলের মেজিস্ট্রেট ও শিক্ষকসহ অনেকের কবর রয়েছে এই চার্চের আঙ্গিনায়। 

সেইন্ট নিকোলাস চার্চ, গাজীপুর

ঢাকায় পর্তুগিজ বণিকদের আগমন ঘটে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে। সম্রাটের অনুমোদন নিয়ে সেইন্ট নিকোলাস টলেন্টিনো গির্জাটি নির্মাণ করেন যার মূল ভবন ১৬৮০ মতান্তরে ১৬৯৫ সালে তৈরি করা হয়। 




সেইন্ট নিকোলাস চার্চ, গাজীপুর, ছবি: অফরোডবাংলাদেশ




নিকোলাস চার্চের সামনে যীশুখ্রিস্টের একটি মূর্তি স্থাপিত রয়েছে। গাজীপুরের নাগরীর অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ এই চার্চ। চার্চ ছাড়াও আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো এই ভবন। বাংলায় অনুবাদিত প্রথব বাইবেল এখানেই ছাপা হয়। এছাড়া বাংলায় লেখা প্রথম বই ছাপা হয় এখানেই।

হলি রোজারি চার্চ, তেজগাঁও

সম্ভবত এটিই বাংলাদেশের সব থেকে পুরাতন চার্চ। তবে এর নির্মাণ কাজ নিয়ে মতভেদ আছে।ইতিহাসবিদ জেমস টেইলরের মতে এটি নির্মাণ করা হয় ১৫৯৯ সালে। তবে ভারতের গয়ার বিশপ গোষ্ঠীর মতে নির্মাণকাল ১৭১৪ আবার আরেক ইতিহাসবিদ জে. জে. আ. ক্যাম্পোস তার কলকাতা রিভিউয়ে উল্লেখ করেন চার্চটি ১৬৮৭ সালে যাত্রা শুরু করে। 

আর্মেনিয়ান চার্চের মতোই একটি ছোট প্রার্থনা ঘর দিয়েই শুরু হয় হলি রোজারিওর যাত্রা। পরে সময়ে সময়ে এর মূল ভবনসহ আশেপাশের ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়। এজন্যেই হয়তো নির্মাণকাল নিয়েই সূত্রভেদে মত পার্থক্য বিদ্যমান।

পর্তুগিজদের আগমনের ফলে এই বাংলায় যে খ্রিস্টীয় বংশের শুরু হয় এরই বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ নির্মিত অসংখ্য চার্চ। 

এসব চার্চের সাথে জড়িত স্মৃতি এখনো বেঁচে আছে এলাকাবাসীর হৃদয়ে। সকাল-সন্ধ্যা দুইবার করে ঘণ্টা বাজে গির্জার শীর্ষে আর এভাবেই অতবাহিত হয় একেকটি দিনের। 

"মাস গিয়ে বছরে গড়ায় 

বছর হয় শতকে

ধুলো জমে আয়নায়

যেমন জমা পড়ে বইয়ের মলাটে, 

কেউ লিখে ইতিহাস 

কাটাতারের খেয়ালে

দাগ থাকে অক্ষত গির্জার দেয়ালে" (মো: ইমরান)

মো: ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত ।

Share if you like