রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে; এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটিতে প্রতিবেশী সিরিয়ায় দুই শতাধিক নিহত ও ৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সহযোগী আহমেদ দামিরেয়ি বলেছেন, “ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩৭ জন হয়েছে এবং ৬৩৯ জন আহত হয়েছেন।”
হতাহতদের অধিকাংশই আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশের বাসিন্দা বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে আরও অন্ত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত হলে সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা তিনশর কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো তুরস্কের সীমান্তবর্তী হওয়ায় সেখানে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওক্তাই জানিয়েছেন, সেখানে এখন পর্যন্ত ২৮৪ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। আহত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৩২৩ জন।
তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশে ৭০, ওসমানিয়ে ২০, মালাটিয়ায় অন্তত ২৩, সানলিউরফার ১৮, দিয়ারবাকিরে ১৪ এবং আদিয়ামানে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্প হয়। প্রবল শীতের মধ্যে ভোররাতে হওয়া এ ভূমিকম্পে প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাস কেঁপে ওঠে। অঞ্চলটির অধিকাংশ মানুষই তখন ঘুমিয়ে ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে শুরু হওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তি গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরে।
তারপর থেকে পরবর্তী ঘণ্টাগুলোতে অন্তত ২০টি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটি ৬ দশমিক ৬ মাত্রার ছিল বলে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর লাতাকিয়া থেকে শুরু করে ভূমিকম্পটি দক্ষিণে রাজধানী দামেস্ক পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে।
তুরস্ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে উদ্ধারকারীদের পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়ে সহায়তা করতে জনসাধারণকে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে।
ভূমিকম্পের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়।
প্রবল ঝাঁকুনিতে বহু ভবন ধসে পড়েছে, সেসব ধ্বংসস্তূপে এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হতাই, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস-এই ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, কাহরামানমারাস শহরে ধসে পড়া ভবনগুলোর চারপাশে লোকজন জড়ো হয়ে জীবিতদের খোঁজ করছে।
তুরস্কের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সানলিউরফার গভর্নর সালিহ আয়হান টুইটারে বলেছেন, “আমাদের অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে।”
তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম আলেপ্পো প্রদেশে বহু ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে। দেশটির হামা প্রদেশের বেসামরিক পরিষেবা কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছে, সেখানেও বেশকিছু ভবন ধসে পড়েছে।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক, লেবাননের রাজধানী বৈরুত এবং বন্দর শহর ত্রিপোলিতে ভূমিকম্পের কারণে লোকজন দৌঁড়ে রাস্তায় বের হয়ে যায়, তাদের ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে আশঙ্কায় কেউ কেউ নিজেদের গাড়ি সেখান থেকে সরিয়ে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
দামেস্কের বাসিন্দা সামের বলেন, “দেয়ালে ঝুলানো পেইন্টিংগুলো পড়ে যায়। আমি আতঙ্কিত হয়ে জেগে উঠি। এখন আমরা সবাই দরজায় নিচে দাঁড়িয়ে আছি।”
উভয় দেশে শত শত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া জীবিতদের রক্ষা করতে উদ্ধারকারীরা কাজ শুরু করেছেন।