ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস পদত্যাগ করেছেন। গত কিছুদিন ধরেই তার সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে তার প্রশাসন ও কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে নজিরবিহীন তোলপাড় চলছিল। খবর বিবিসি বাংলা'র।
তার সরকারের দুজন মন্ত্রী ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন, এক ডজনেরও বেশি এমপি প্রকাশ্যেই তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে তার পদত্যাগ দাবি করছিলেন।
এ প্রেক্ষাপটেই আজ বৃহস্পতিবার লন্ডনে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের কথা জানান লিজ ট্রাস।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যে ম্যানডেটের ভিত্তিতে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই ম্যানডেট তিনি পূরণ করতে অপারগ। তাই তিনি রাজা তৃতীয় চার্লসকে তার পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন, এবং এক সপ্তাহের মধ্যে কনসারভেটিভ পার্টি তার উত্তরসূরীকে বেছে না নেয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে লিজ ট্রাস হচ্ছেন সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী। তিনি মাত্র ৪৫ দিন ক্ষমতায় ছিলেন।
কনজারভেটিভ পার্টিতে তার উত্তরসূরী নির্বাচনের জন্য আবার ভোটাভুটি হবে। ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের একটি বিশেষ কমিটির প্রধান জানিয়েছেন আগামী শুক্রবারেই নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ফল জানা যাবে।
তবে বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টার্মার অবিলম্বে নতুন সাধারণ নির্বাচন দাবি করেছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাট এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিও নতুন নির্বাচন দাবি করেছে।
কেন পদত্যাগ করতে হলো লিজ ট্রাসকে
কারণ প্রধানত দুটি । প্রথমতঃ লিজ ট্রাসের ঘোষিত অর্থনৈতিক কর্মসুচির ব্যর্থতা এবং দ্বিতীয়তঃ তার নিজ দলের এমপির মধ্যে আস্থা ও সমর্থন হারানো।
প্রধানমন্ত্রী হবার সময়ই লিজ ট্রাস বলেছিলেন, তিনি নিম্ন কর হার এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির ব্রিটেন গড়ে তুলবেন। তার প্রথম অর্থমন্ত্রী কোয়াজি কোয়ার্টেংকে যে মিনি বাজেট দেন তাতে ব্যাপক কর ছাঁটাইএর কথা ছিল কিন্তু এর জন্য অর্থসংস্থান করতে সরকারকে হাজার হাজার কোটি পাউন্ড ঋণ নিতে হতো।
এ বাজেট ঘোষিত হবার পরপরই তা অর্থখাতে নজিরবিহীন সংকট সৃষ্টি করে এবং মি. কোয়ার্টেং পদত্যাগ করেন। নতুন অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট এসে সেই পরিকল্পনার অধিকাংশই বাতিল করে নতুন পরিকল্পনা হাজির করেন।
এর পর থেকেই এমপিদের আস্থা হারাতে থাকেন লিজ ট্রাস। অন্তত ১৩ জন এমপি প্রকাশ্যে তাদের অনাস্থা প্রকাশ করে পদত্যাগ দাবি করেন।
লিজ ট্রাস প্রশাসন, দল এবং পার্লামেন্ট - সর্বত্রই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। গতকাল তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানও পদত্যাগ করেন। পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি নিয়ে সরকারি দলের এমপিদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ থেকে প্রায় ধস্তাধস্তির উপক্রম হয়।
বিশ্লেষকরা বলছিলেন, এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে মিজ ট্রাস ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
নতুন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে হবেন, কে হবেন?
লিজ ট্রাস তার ভাষণে বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
সাধারণত কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরে এ নির্বাচনের প্রক্রিয়া কয়েক মাস ধরে চলে। প্রথম এমপিরা কয়েকজন প্রার্থীকে নির্বাচন করেন এবং তাদের মধ্যে যিনি পার্টি সদস্যদের ভোট সবচেয়ে বেশি পান তিনিই প্রধানমন্ত্রী হন।
কিন্তু এক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটি হয়তো এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে। '১৯২২ কমিটি' নামে এমপিদের বিশেষ কমিটির প্রধান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডি বলেছেন আগামী শুক্রবারের মধ্যেই এ নির্বাচনের ফল জানা যাবে এবং তাতে পার্টি সদস্যরাও জড়িত থাকবেন।
বরিস জনসনও প্রার্থী হতে পারেন?
ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে এখন নানা জল্পনা চলছে।
লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হবার সময় যারা তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন - তার মধ্যে অন্তত দুজন ঋষি সুনাক এবং পেনি মরড্যান্টের নাম শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে।
এ ছাড়া আছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের নাম। অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে পদত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও আবার প্রধানমন্ত্রী হবার প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন।
একটি জনমত জরিপে বলা হচ্ছে, সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় এক নম্বরে আছেন ঋষি সুনাক ।