Loading...
The Financial Express

র‌্যাবের জালে নতুন জঙ্গি দল, কারা এরা?

| Updated: October 07, 2022 18:33:53


গ্রেপ্তার সাতজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা সামগ্রী। গ্রেপ্তার সাতজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা সামগ্রী।

‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন র‌্যাবের নেটওয়ার্কে ধরা পড়লেও এতে কত সদস্য, নেতৃত্বে কারা কিংবা কী পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে তাদের হাতে, সেসব নিয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। 

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার তিনজন তত্ত্বাবধায়ক বা প্রশিক্ষক এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ জনের মতো নতুন সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের তথ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন চারজন।

কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই ছাত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- পটুয়াখালীর মাদ্রাসা শিক্ষক হোসাইন আহম্মদ (৩৩), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের (৩৪), পটুয়াখালীর কম্পিউটার ব্যবসায়ী বণি আমিন (২৭), কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯) ও হাসিবুল ইসলাম (২০); তাদের সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া গোপালগঞ্জের ডিপ্লোমা প্রকৌশলী রোমান শিকদার এবং ঢাকার একটি ছাপাখানার কর্মী মো. সাবিত (১৯)।

তাদের কাছ থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, জঙ্গি সংগঠনটির কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘নেদায়ে তাওহীদ’, জিহাদী উগ্রবাদ ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছে।

র‌্যাবের পরিচালক জানান, গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে হোসাইন, নেছার ও বণি আগেই উগ্রবাদে দীক্ষিত ছিলেন। এই তিনজনই সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে যুক্ত ছিলেন।

এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা কত- এ প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ আঞ্চলিক নেতা পর্যন্ত আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এরা কাট-আউট মেইনটেইন করে। তাতে এই সংগঠনের নামটি আমরা পেয়েছি।

“বিভিন্ন সংগঠন থেকে লোক চলে এসে তারা প্রথমত একসঙ্গে কাজ শুরু করে। শূরা সদস্য কয়জন বা তাদের আমির কে এসব এখনও জানি না। জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।”

সংগঠনটির সদস্যের বিষয়ে ধারণা চাইলে তিনি বলেন, “সিলেটের চারজন ডিসেম্বর থেকেই নিখোঁজ। আর গ্রেপ্তার সদস্যরা কেউ বলেছে, তারা ২২-২৫ জনের কথা জানে।”

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মঈন জানান, কুমিল্লার নিখোঁজ সাত তরুণের সঙ্গী ঢাকার কল্যাণপুরের শারতাজ ইসলাম নিলয় নামে আরেক তরুণ বাড়িছাড়ার এক সপ্তাহ পরই ১ সেপ্টেম্বর ঘরে ফিরে আসেন।

“তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক মাস ধরে অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে র‌্যাব সাতজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এরা সবাই নতুন জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন।”

নিখোঁজ অন্য তরুণরা কোথায়- এ প্রশ্নের উত্তরে মঈন বলেন, “নিলয়ের সঙ্গে তিনজন ছিল, হাসিব ও রিফাতের সঙ্গে আরও পাঁচজন ছিল; তাদের আমরা পাইনি। তাদের বলা হয়েছে সহিংস সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে। পরবর্তী ধাপে তাদের আরও দুর্গম ও নির্জন স্থানে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”

ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক নিলয় নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পেরে মাস খানেক পর ফিরে আসেন বাড়িতে। তাকে নজরদারিতে রেখেই নিখোঁজ অন্যদের খোঁজ বের করা হয় বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে পটুয়াখালী

র‌্যাবের পরিচালক জানান, গত ২৩ অগাস্ট নিলয়সহ নিখোঁজ ৮ তরুণ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় সোহেল নামে এক ব্যক্তির কাছে যান।

“সোহেল জঙ্গি সংগঠনটির একজন নিচের সারির সমন্বয়ক ও রিক্রুটার। পরবর্তীতে সোহেলের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেল ক্রসিংয়ের কাছে হাউজিং স্টেট এলাকায় যাওয়ার জন্য বের হয়। নিলয়, সামি ও নিহাল একসঙ্গে বের হন। কিন্তু ভুল করে তারা লাকসামের বদলে চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়।

“ভুল বুঝতে পেরে রাতযাপনের জন্য তারা চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে কর্তব্যরত পুলিশ সন্দেহজনক আচরণের কারণে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে পুলিশ তাদেরকে পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় এবং পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা রাতের বেলা হোটেল থেকে কৌশলে ভোরে পালিয়ে যায়।”

পালিয়ে তারা লাকসামের পূর্ব নির্ধারিত ঠিকানায় যায় উল্লেখ করে র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সেখানে সোহেলসহ দুই ব্যক্তি তাদেরকে লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাড়িতে আগে থেকেই কয়েকজন অবস্থান করছিল।

পরে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেন সোহেল। নিয়ামতের তত্ত্বাবধানে একদিন থাকার পর ওই চারজনকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসেন সোহেল।

ঢাকায় নিহাল, সামি ও শিথিলকে আরেক ব্যক্তির জিম্মায় দিয়ে নিলয়কে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চের টিকিট কেটে দেন সোহেল। পটুয়াখালীতে পৌঁছার পর নিলয়কে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় নিয়ে যান বণি আমিন (গ্রেপ্তার হওয়া)। সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষক হোসাইন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নেছার উদ্দীনের (দুজনই গ্রেপ্তার) সঙ্গে নিলয়ের পরিচয় করিয়ে দেন আমিন।

আমিন নিজের বাসায় নিলয়কে তিন দিন রাখার পর তাকে হোসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসেন। সেই মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার কল্যাণপুরে বাসায় ফিরে আসে নিলয়।

যেভাবে ধরা হলো তাদের

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈনের ভাষ্য, নিলয়ের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে বিভিন্ন হোটেল থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে পালিয়ে যাওয়া তরুণদের শনাক্ত করা হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী বণি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা হতে নেছারকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে হোসাইন আহম্মদ, রিফাত, হাসিব, রোমান শিকদার ও সাবিতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মঈন জানান, গ্রেপ্তার হাসিব ও রিফাত এক বছর আছে কুমিল্লার কোবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর কাছে এই জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পায়। পরবর্তীতে হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম ওরফে হানজালা নামের আরেকজনের কাছে পাঠায়। ফাহিম তাদেরকে কুমিল্লার বিভিন্ন মসজিদে নিয়ে গিয়ে আশপাশের দেশসমূহে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান দিত এবং উস্কানিমূলক ভিডিও দেখাতেন।

“মুলত দেশের বিচার ব্যবস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা কথাবার্তা বলে তাদের সুপ্ত ক্রোধ উস্কে দেওয়া হয়, বিক্ষুব্ধ করে তোলা হয়। এইভাবে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা হয়।”

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া রোমান স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ৪০ দিন আগে ঘর ছাড়েন। সাবিত দুই মাস আগে পটুয়াখালীতে নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই উগ্রবাদীদের সঙ্গে যুক্ত হন।

কীভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে

র‌্যাব জানিয়েছে, সোহেলের তত্ত্বাবধানে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ তরুণদের প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। ‘সেইফ হাউজে’ রেখে পটুয়াখালী এলাকার সিরাজ ওরফে রবি নামের একজনের তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়া হয় বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

গ্রেপ্তার হোসাইন আহম্মদ পটুয়াখালীর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তার ভাষ্য, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজির সাবেক কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে সংগঠনটি ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (হিন্দুস্থানের পূর্বাঞ্চলীয় জামাতুল আনসার) নাম নেয়।

হোসাইন সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া তিনি সদস্যদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দিতেন। তিনি ২০১৪-১৫ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়ার সময় সিরাজ নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হন। হোসাইন এখন পর্যন্ত ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলে র‌্যাবকে জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের ভোলার চর ফ্যাশনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে। তিনি ২০১৯ এর আগে উগ্রবাদী কার্যক্রমে যুক্ত হন। তিনি বাড়ি ছাড়ার পর নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এ পর্যন্ত ৯-১০ জন সদস্য তত্ত্বাবধান ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

গ্রেপ্তার আরেকজন বণি আমিন উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে পটুয়াখালী এলাকায় কম্পিউটার বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা করেন। তিনি নতুন সদস্যদের আশ্রয় ও তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ছিলেন। ২০২০ সালে হোসাইনের মাধ্যমে বণি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত ২২ থেকে ২৫ জন সদস্য তার আশ্রয়ে ছিল বলে তিনি র‌্যাবকে জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার রোমান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করে গোপালগঞ্জে ইলেকট্রিক্যাল ও স্যানিটারির কাজ করতেন। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে তিনি উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি সম্পর্কে ধারণা পান। প্রায় এক মাস আগে তিনি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন।

আর গ্রেপ্তার হওয়া সাবিত উত্তরা এলাকায় একটি ছাপখানায় স্টোর কিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি এক আত্মীয় ও অনলাইনে ভিডিও দেখে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়। গত জুন মাসে ঢাকায় সিরাজের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর প্রায় দুই মাস আগে নিখোঁজ হয় সাবিত।

কী প্রশিক্ষণ

র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন জানান, ঢাকা, পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চরে আরও কিছু ব্যক্তি ঘরছাড়াদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়। তাদের মানসিকভাবে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে উগ্রবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়। একের পর এক প্রশিক্ষণ চলে।

“এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। সোহলের নেতৃত্বে তাদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে তারা কোনো জায়গায় আত্মগোপনে থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে জীবিকা অর্জন করতে পারে। তাদের ইলেকট্রিক কাজ, রাজমিস্ত্রীর কাজ শেখানো হয়। প্রশিক্ষণের বিভিন্ন পর্যায় আছে। এক প্রশিক্ষণে যারা ফেইল করে, তাদের পরবর্তী প্রশিক্ষণে নেওয়া হয়নি। এভাবে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন জায়গায় রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।”

চরাঞ্চলে তাদের কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “ভোলার বিভিন্ন চরে ঢাকা থেকে কখনও সিরাজ গিয়েছে, হোসাইন গিয়েছে, আরও কয়েকজন গিয়েছে। একেকজনের তত্ত্বাবধানে তরুণেরা ৫-৬ দিন করে ছিল। তাদের শারীরিকভাবে ফিট করা হয়েছে।

“তাদের খাপ খাওয়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হযেছে। সংগঠন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে. পুরনো যে জঙ্গি সংগঠনগুলো জেএমবি, হিযবুত, আনসার- এরা তাদের সদস্য ধরা পড়লে ঠিকমতো খোঁজ-খবর নেয়নি। তবে নতুন সংগঠন তেমনটা নয়, কেউ গ্রেপ্তার হলে তাদের পরিবার ও আদালতে খোঁজ রাখা হবে।”

এই সংগঠনের জঙ্গি হামলা চালানোর ক্ষমতা কতখানি- এ প্রশ্নের উত্তরে মঈন বলেন, “আমরা কখনওই আত্মতুষ্টিতে ভুগি নাই। তবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দক্ষিণাঞ্চলের আঞ্চলিক নেতাসহ একটি গ্রুপকে আমরা আটক করতে পেরেছি। র‌্যাব সদরের গোয়েন্দা শাখা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো কংক্রিট তথ্য আমাদের কাছে নেই।”

কয়েক দশক আগে আফগানিস্তান ফেরত তালেবান সদস্যদের মধ্য থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের গোড়াপত্তন হলেও তা বড় ভিত্তি পেয়েছিল দুই দশক আগে জামায়াতুল মুজাহিদিনের মাধ্যমে। ২০০৫ সালে সারাদেশে এক যোগে বোমা হামলা চালিয়ে নিজেদের শক্তি জানান দেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়ে ওই সংগঠনের শীর্ষনেতাদের সবাই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।

এরপর মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের উত্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদ ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে প্রায় এক দশক আগে। তারাই ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে বিদেশিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল, যা সারাবিশ্বেই আলোড়ন তোলে।

এরপর র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে তখনকার জঙ্গিদের অধিকাংশই কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান।

এরপর জঙ্গিদের তৎপরতা মাঝে-মধ্যে দেখা গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের আর মাথা তোলার সক্ষমতা নেই।

র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন ক’দিন আগেই বলেছিলেন, “জঙ্গিরা যত বেশি স্মার্ট হোক না কেন, র‍্যাব ফোর্স তার চেয়ে বেশি স্মার্ট।”

Share if you like

Filter By Topic