Loading...
The Financial Express

রাজধানীতে এক পরিবারের খাবারের খরচ মাসে ২২,৪২১ টাকা: সিপিডি

| Updated: October 21, 2022 20:38:25


রাজধানীতে এক পরিবারের খাবারের খরচ মাসে ২২,৪২১ টাকা: সিপিডি

ঢাকা নগরীতে চারজনের একটি পরিবারের অক্টোবর মাসের খাবারের হিসাব তুলে ধরে সিপিডি জানায়, মাছ ও কোনো প্রকার মাংস না খেলে ওই পরিবারকে মাসে খাবার কিনতে খরচ করতে হয় গড়ে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। এর সঙ্গে মাছ ও মাংস যুক্ত হলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৪২১ টাকা।

বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সংবাদ সম্মেলনে জনজীবনে মূল্যস্ফীতির বর্তমান চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এমন তথ্য দেয়।

সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “এটা কম্প্রোমাইজ ডায়েট বা আপসের খাদ্যতালিকা। বেতন প্রতিবছর ৫ শতাংশ বাড়লেও সেটা ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম৷”

বৃহস্পতিবার সিপিডি কার্যালয়ে ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ: উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক মিডিয়া বিফ্রিংয়ে ইউক্রেইন যুদ্ধ ও বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির প্রভাব তুলে ধরেন।

তিনি জানান, বাজারে দৈনন্দিন অনেক পণ্যের মূল্য ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের দেওয়া গড় মূল্যস্ফীতি বাজারের চিত্র তুলে ধরছে না। সরকারের হিসাবেও এবার খাদ্য এবং খাদ্য বহির্ভূত উভয় খাতের পণ্যেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে।

“সরকার অগাস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ এবং ৯ দশমিক ১ শতাংশ বললেও বাস্তবে আমরা বাজারে গেলে সেই চিত্রের সঙ্গে মিল পাই না। মূল্যস্ফীতি আরও বেশি বলে অনুভূত হয়,” যোগ করেন তিনি।

ঢাকা নগরীতে একটি পরিবারের খাবারের খরচের তথ্য তুলে ধরে তিনি শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো এখন ‘অত্যাবশ্যক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন।

মূল্যস্ফীতির এমন চাপে শহরের পাশাপাশি দরিদ্র্যপ্রবণ এলাকার বিশেষ করে নয় জেলার দরিদ্র মানুষ এখন অনেক খারাপ সময় পার করছে বলে মন্তব্য করেন।

“গত মে ও জুনে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নয় জেলার প্রায় ৭০ লাখ মানুষ চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য সংগ্রহে সংকটে পড়ছেন,” বলেন তিনি।

বিফ্রিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আগামী বছর বিশ্বে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে উদ্ভূত সংকট এবং আগামী বছরে খাদ্য সংকটের আশংকা মোকাবিলা করতে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এর অংশ হিসেবে অর্থ, পরিকল্পনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।

পণ্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে একচেটিয়াভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণকেও কারণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। দেশে কিছু পণ্যের দাম দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দেশের বাজারে পণ্যের আসল মূল্যের চেয়ে বেশি দাম কিভাবে নেওয়া হচ্ছে সেটির বর্ণনা দিয়ে ফাহমিদা বলেন, “দেশে পণ্যের আসল যে দাম হওয়ার কথা বাজারে তার চেয়ে বেশি দেখা যায়। আমি জানি একচেটিয়া বা কয়েকজন মিলে বাজারটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। যার ফলে আমদানি বা দেশীয় পণ্যই বলি সেখানে একটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।”

এই একচেটিয়া বাজার ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য তিনি ২০১২ সালের প্রতিযোগিতা আইন সংশোধন করে এবং সেই আইন প্রয়োগ করে তদারকি বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন।

এক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত পাউরুটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি।

এছাড়া প্রতিকেজি গরুর মাংস দেশে ৬৫০ টাকার বেশি বিক্রি হলেও এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর গড় মূল্য ৫৫০ টাকা। আমদানি পণ্যের দামও দেশে বেশি হারে নেওয়া হয়।

এর পেছনে কর ব্যবস্থাপনাও কিছুটা দায়ী মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রায় ২৯টি আমদানি পণ্যের ওপর ১০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত করারোপ করা হয়। এরফলেও স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। অথচ সরকার বিশেষ করে খাদ্যপণ্যে কর ছাড় দিলে বাজারে দাম কমে আসে।

এসময় তিনি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে বলেন, এখন বিশ্ববাজারে দাম আগের চেয়ে অনেক কমে গেলেও সরকার মূল্য সমন্বয় করছে না। অথচ জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার কারণে বস্ত্র, সিরামিক, গ্লাস উৎপাদন কারখানা পুরো উৎপাদন করতে পারছে না।

তিনি জানান, সাধারণত ৬০ দিনের জ্বালানি মজুদ রাখা হয়৷ কিন্তু আমাদের ডিজেল ৬১ দিন, অকটেন ১৯ দিন, পেট্রোল ৩৮ দিন এবং ২৭ দিনের ফার্নেস অয়েল মজুত আছে।

“বিপিসির হাতে ২৩ হাজার কোটি টাকা আছে। টাকা একদম নেই বিষয়টা তেমন নয়,” যোগ করেন তিনি।

জ্বালানি তেলই মূল্যস্ফীতি বাড়ার প্রধান কারণ উল্লেখ করে তিনি দাম পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

জ্বালানির ঘাটতি মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহবান জানান।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি সামনের দিনে ডলার-সংকটে খাদ্য আমদানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সকল শর্ত স্পষ্ট করে উল্লেখ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সম্মেলনে বর্তমানে দেশে মোট সাত সমস্যা চিহ্নিত করে সংস্থাটি। সেগুলো হচ্ছে- ডলার সংকট, জ্বালানির দর, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খাদ্য সংকটের শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন, রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধ ও কোভিড-১৯।

এসব সংকট কাটাতে পণ্য আমদানিতে কর রেয়াত দেওয়া, ন্যূনতম বেতন বাড়ানো, উৎপাদন বাড়ানো, সারের উচ্চমূল্যের কারণে ভর্তুকি দেওয়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেয় সিপিডি।

বিফ্রিংয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত ও মোন্তাসির কামাল উপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

Share if you like

Filter By Topic