ডেনমার্ক প্রবাসী হোসাইন খান কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। শনিবার একটি সেডান গাড়ি নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত পৌনে বারোটার দিকে কুমিল্লার মাটিয়ারা এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়েন।
যেখানে তিনি ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন, এর আগেও ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ওই এলাকায় এর আগেও বেশ কয়েকবার ডাকাতি হয়েছে।
''চক্রটা দীর্ঘদিন ধরে এসব করে আসছিল, আমাদের একেবারে জ্বালিয়ে ফেলছিল। আমরা ওই এলাকায় একটা মোবাইল (টহল) পার্টির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। যেহেতু ওখানে ঘটনা ঘটে। ওদের এতো সাহস হয়ে গেছে, কাল ওখানে টিম থাকার পরেও ডাকাতির সাহস করেছে।''
তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এই ডাকাত বাহিনীটা গড়ে উঠেছে। স্থানীয় কয়েকজন বাহিনীতে রয়েছে, তবে বেশিরভাগ বিভিন্ন জেলার লোকজন এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
পুলিশ বলছে, যেদিন ডাকাতির ঘটনা ঘটাবে, সেদিন এসে তারা একসাথে জড়ো হয়। ডাকাতির পর মালামাল ভাগ করে আবার নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়। ফলে পুলিশ চেষ্টা করার পরেও দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটিতে ধরা সম্ভব হচ্ছিল না।
অপরাধীদের এই চক্রটি সবসময় একই পদ্ধতিতে ডাকাতি করতো।
একজন সামনের দিকে থাকে। যখন প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস আসে,তখন সেই ব্যক্তি গাড়ির সামনের চাকার দিকে রড ছুঁড়ে মারে। রডের সাইজ হয় এক থেকে দেড় ফিট।
চলন্ত গাড়ির নীচে রড লেগে শব্দ হয়। তখন গাড়িতে কোন সমস্যা হয়েছে মনে করে চালক কিছুটা দূরে গিয়ে গাড়ি থামায়। সেখানেই দলের বাকি সদস্যরা আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকে। তারা তখন চালককে আটক করে এবং বাকি যাত্রীদের গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে লুটপাট করে। পাশেই ফাঁকা জমি আছে। সেটার ভেতর দিয়ে তারা হেঁটে চলে চলে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, সোনারগাঁও, চান্দিনা, ফেনী, চৌদ্দগ্রামেও একই পদ্ধতিতে মহাসড়কে ডাকাতি হয়। তবে একই চক্র করে কিনা, তা পুলিশ নিশ্চিত নয়। কিন্তু তারা ধারণা করেন, এই চক্রটি ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করে থাকতে পারে।
একই ঘটনা ঘটেছে হোসাইন খানের ক্ষেত্রেও।
থানায় দায়ের করা এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ঢাকার ধানমণ্ডিতে চাচার বাবা থেকে চট্টগ্রামে গ্রামের বাড়িতে যাবার পথে মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় পৌঁছলে হঠাৎ গাড়ির নিচে শব্দ হয়। তখন চালক রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষা করতে যায়। সেই সময় তিনি ডাকাতের কবলে পড়েন।
ডাকাত দলটিকে পুলিশের যে টিম ধরেছে, তার একজন সদস্য বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, '' মাটিয়ারায় টহল দেয়ার সময় দেখলাম একটা প্রাইভেট গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেছে। তারা যখন সেটা পাল্টানোর কাজ করছিল, আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই সময় খবর পেলাম, কিছুদূরে একটা প্রাইভেট কারের কয়েকজন যাত্রীকে মারধর করা হচ্ছে।''
আমরা যখন সেখানে গেলাম, তারা পুলিশের পোশাক দেখে সরে যায়। যখন আমরা তাদের ধাওয়া করতে শুরু করলাম, তখন তারা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। আমরাও পাল্টা গুলি করতে বাধ্য হই। এভাবে ধাওয়া করে ফাঁকা জমির মধ্যে গিয়ে আমরা দুইজনকে ধরে ফেলি। বাকিরা পালিয়ে যায়। দুজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দলে ৮/১০ জন সদস্য ছিল, তাদের কয়েকজনের নাম জানা গেছে। বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
তিনি জানান, ডেনমার্ক প্রবাসী ব্যক্তির মোবাইল ফোন ছাড়া বাকি সব মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। একটি ডাকাতির মামলা, অন্যটি অস্ত্র মামলা। খবর বিবিসি বাংলার।