রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ১০ হাজারেরও বেশি ইভিএম ব্যবহার উপযোগী করার প্রক্রিয়া নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় অন্তত ছয় হাজার ইভিএমে নানা ধরনের মেরামত করতে হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন ভোটের আগে রংপুর অঞ্চলে মজুদ এসব যন্ত্রের হালনাগাদ ‘কোয়ালিটি চেকিং (কিউসি)’ তথ্য কমিশনে উপস্থাপন করেছে ইভিএম প্রকল্প।
তাতে জানানো হয়, এ অঞ্চলে থাকা ১০ হাজার ৭৫৯টি ইভিএম সেটের মধ্যে ৪ হাজার ৭১২টি কিউসি উত্তীর্ণ এবং ৬ হাজার ৩৫টি ‘ত্রুটিপূর্ণ’। পাশাপাশি ১ হাজার ১২৩টির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ হারিয়ে গেছে।
বর্তমানে ইসির কাছে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে। এরমধ্যে অর্ধলক্ষাধিক রাখা আছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ)। বাকিগুলো ১০টি নির্বাচনী অঞ্চলে মজুদ রয়েছে।
পাঁচ বছর ধরে মাঠ পযায়ে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ২০-৩০ শতাংশ ইভিএমের প্যাকেট, ব্যাটারি, মনিটর, ইউপিএস, কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিটে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান।
রংপুর অঞ্চলের বিষয়ে ভোটের প্রস্তুতির সময়ে ইসির কাছে গেল সেপ্টেম্বরেই সার্বিক তথ্য তুলে ধরে ইভিএম প্রকল্পের পক্ষ থেকে।
-
অধিকাংশ ইভিএমের প্যাকেট উইপোকায় খাওয়া, প্যাকের ভেতেরে কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিটসহ ব্যাটারি, মনিটর, ইউপিএস উইপোকা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
-
জরাজীর্ণ ও ছেঁড়া মোড়ক/প্যাকেট ফেরত পাঠানো হয়েছে।
-
সংরক্ষণে অত্যন্ত অযত্ন ও অবহেলায় অনেকগুলো অকেজো হয়ে গেছে।
-
অগোছালো ও দাঁসারাভাবে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই দীর্ঘদিন মজুদ রাখায় বিএমটিএফে পাঠানো হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৭ ডিসেম্বর চার লাখেরও বেশি ভোটারের রংপুর সিটিতে ইভিএমে ভোট হবে। এ নির্বাচনে প্রতি ভোটকক্ষের জন্য ইভিএমে রাখার পাশাপাশি কারিগরি ত্রুটি এড়াতে অতিরিক্ত যন্ত্রও প্রস্তুত রাখবে ইসি।
মঙ্গলবার জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিটি নির্বাচনের আগেই ইভিএমগুলোর কিউসি (কোয়ালিটি চেক) করা হয়। যেসব যন্ত্রের কোনো ধরনের মেরামতের দরকার থাকে অথবা ব্যাটারি, তার, মনিটরের মতো যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলো বিএমটিএফে পাঠানো হয়। রংপুরের ক্ষেত্রেও মাঠ পর্যায়ের তথ্য প্রকল্প থেকে নেওয়ার পর উপযোগী রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, বিএমটিএফে অর্ধ লাখ ইভিএম সংরক্ষণে আছে। মাঠপর্যায়ে কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে বা সারতে বিলম্ব হলেও সংরক্ষিত ইভিএম রয়েছে।
“উদ্বেগের মতো কোনো বিষয় নেই, আঞ্চলিক অফিসে মজুদ যন্ত্রগুলোর মেরামত নিয়মিত প্রক্রিয়া। বিএমটিএফ নির্ধারিত চুক্তির আওতায় তা মেরামত করে উপযোগী করে ফেলে। কিউসি স্ট্যাটাস ঠিক করার পর প্রয়োজনীয় কার্ড প্রস্তুত, কাস্টমাইজেশন, ইন্সটেলেশনের মতো কাজগুলো ধাপে ধাপে করা হয়। ভোটের নির্ধারিত সময়ের আগেই সবকিছু প্রস্তুত থাকবে।”
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ইভিএম সেটগুলো যথাযথ মেরামতের জন্য বিএমটিএফে পাঠানো শুরু হয়েছে। প্রথম পযায়ে প্রায় ২ হাজার ইভিএমে পাঠানো হয়।
দেশব্যাপী জেলা/উপজেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ রেখে প্রকল্প বলেছে, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হলে অনেক ইভিএম ভবিষ্যতে অনুপযোগী হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরে থাকা ইভিএম মেশিনগুলো অনেক পুরোনো। পাঁচ বছর ধরে সেখানে আছে। সেই মেশিনগুলোতে কিছু কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের আগে সেগুলোকে সার্ভিসিং করিয়ে নিতে হবে। শুধু এতটুকুই।
যন্ত্রাংশ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটি ইভিএম মেশিনের ১৩ থেকে ১৪টি যন্ত্রাংশ থাকে। এর মধ্যে হয়ত দুই-একটি যন্ত্র খুলে ফেলেছে। যেসব যন্ত্রাংশ হারিয়ে গিয়েছে সেগুলো বিএমটিএফ মেরামত করে দেবে।
এ কর্মকর্তা বলেন, “ইভিএমের বাক্সগুলো সাধারণত হার্ড বাক্স হওয়ার কথা। কিছু ইভিএমের বাক্স কাগজের ছিলো। সেগুলোতে হয়ত উইপোকা ধরেছে। বিএমটিএফে হার্ড বাক্স প্রস্তুত আছে। ইভিএমগুলো সার্ভিসিং করে হার্ড বাক্সতে করে আবারও রংপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই রিপ্লেস কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।”
প্রকল্প পরিচালক জানান, রংপুর অঞ্চলের ইভিএমগুলো সার্ভিসিং করার পরে সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলেরগুলোর ‘কোয়ালিটি চেকিং’ করা হবে। এটা হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এভাবে পর্যায়ক্রমে দেড় লক্ষ মেশিনের ক্ষেত্রে তা অব্যাহত থাকবে।