বয়স বাড়ার সঙ্গে হাড় দুর্বল হয়। আর এই প্রক্রিয়াতে বাজে প্রভাব ফেলে কিছু খাবার।
বলা হয়ে থাকে দেহ হল হাড় তৈরির কারখানা। তবে সেটা তরুণ বয়স পর্যন্ত। বয়স ত্রিশের পর থেকে দেহের এই প্রক্রিয়া ধীর হতে থাকে। তাই হাড় মজবুত রাখার জন্য যেমন দরকার ক্যালসিয়াম প্রয়োজনীয় খনিজ তেমনি দরকার কিছু ক্ষতিকর খাবার বাদ দেওয়া। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
উচ্চ সোডিয়াম ধরনের খাবার
নোনতা খাবার যেমন- আলুর চিপস, পিৎজা, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং টিনজাত সুপে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ও ‘দ্যা মেনোপোজ ডায়েট প্ল্যান, এ ন্যাচারাল গাইড টু হরমোন্স, হেল্থ অ্যান্ড হ্যাপিনেস’য়ের সহ-লেখক এলিজাবেথ ওয়ার্ড ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “কম পুষ্টিকর ও উচ্চ লবণযুক্ত খাবার হাড়ের ভর বজায় রাখতে উপকারী ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও পটাসিয়াম সরবারহ করে না। উল্টো রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ার কারণে হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজগুলোর ক্ষতি হয়।”
সোডিয়াম ও ক্যালসিয়াম একসঙ্গে হাড়ে জমা থাকে। অতি মাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণের ফলে তা হাড় থেকে ক্যালসিয়াম দূর করে প্রস্রাবের মাধ্যমে। ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে।
স্যান ফ্রান্সিসকো’র নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ও ‘অ্যাপেটাইট হেল্থ’য়ের সহকারী প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়া আপটন ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গবেষণায় দেখা গেছে যারা অনেক বেশি মাংস ও প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ করেছিলেন তাদের দেহে প্রদাহের মাত্রা বেশি ছিল।
“অন্যদিকে বেশি করে উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়াতে প্রদাহ এবং বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণে রাখে,” বলেন আপটন।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেইট, বাড়তি চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয়
নিউ ইয়র্কের ‘দ্যা ল্যানবাই’য়ের সুস্থতা-বিষয়ক পরামর্শক এবং নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ টেইলর ফাজিও বলেন, “অতিরিক্ত পরিশোধিত খাবার যেমন- বাড়তি চিনি, ময়দা ও সিরাপ দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে যা বিপাকে বিঘ্ন ঘটায় এবং ‘অস্টিওপোরোসিস’য়ের ঝুঁকি বাড়ায়।”
এই পরিস্থিতি ঘটে যখন চিনি সমৃদ্ধ পানীয় ও সোডা গ্রহণ করা হয়। এগুলো হাড় দুর্বল করে ও শক্তি কমায়।
ফাজিও বলেন, “সোডাতে আছে ফস্ফরিক অ্যাসিড যা ক্যালসিয়াম শোষণ করে। ফলে ক্যালসিয়াম-ফসফরাস শোষণের অনুপাতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় এবং হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে।”
উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘মেনোপোজ জার্নাল’য়ে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র গবেষকদের করা গবেষণার ফলাফল থেকে জানান, দেখা গেছে মেনোপোজের পরে যেসব নারী দিনে দুই পরিবেশনের বেশি সোডা গ্রহণ করেন তাদের ‘হিপ ফ্র্যাকচার’ হওয়ার ঝুঁকি সাধারণের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেড়ে যায়।
তাই, সোডা পানীয়র পরিবর্তে, স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক ফেলে না এমন মিষ্টিবিহীন কার্বোনেইটেড পানীয় গ্রহণ করা যেতে পারে।
মটর-জাতীয় খাবারও ক্ষতি করে
বীজ, মটর ও শুঁটি ধরনের সবজি কিছু পুষ্টি শোষণ বাধা দেয়।
ফাজিও বলেন, “ফাইটিক অ্যাসিড কিছু খনিজ যেমন- ক্যালসিয়াম শোষনে বাধা দেয়।”
তবে ফাজিওসহ অন্যান্য পুষ্টিবিদেরাও মটর খাওয়ার ইতিবাচক দিক সম্পর্কে সমর্থন করেন।
ওয়ার্ড বলেন, “মটর বিশেষত, কালো মটর ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম সরবারহ করে যা ‘অস্টিওপোরোসিস’ দূরে রাখতে পারে। এতে থাকা অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন- ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন কে এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।”
সুষম খাবারের অংশ হিসেবে সবজি খাওয়া হাড়ের উপকার করে। এটা প্রাকৃতিকভাবেই ঘটতে থাকা ‘ফাইটাটেস’য়ের ঝুঁকি কমায় যা রান্নার আগে ভিজিয়ে রাখা অঙ্কুরিত মটর ও সবজি গাঁজনের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম, লৌহ এবং জিংক শোষণে সহায়তা করে।
তাই সারা রাত বীজ, মটর ও শুঁটি ধরনের খাবার ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় ভিজিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে রান্নার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে ‘ফাইটাটেস’ কমতে সহায়তা করে।