নানান ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় লিভার বা যকৃতকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, যকৃত এমন অনেক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত যা আমরা বুঝতেও পারি না। এটা দেহ থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করা, হজমক্রিয়া, খাবার ভাঙন, রক্ত সঞ্চালন, রক্ত জমাট বাঁধাসহ শত-রকমের কাজ করে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তাই গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গকে সুস্থ রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা উচিত।
নানাভাবে যকৃতকে সুরক্ষিত রাখা যায় যেমন- অ্যালকোহল গ্রহণের মাত্রা পরিমিত রেখে, ধূমপান থেকে বিরত থেকে, এবং সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে।
‘আমেরিকান লিভার ফাউন্ডেশন’ সঠিক খাদ্যাভ্যাস বলতে উদ্ভিজ্জ ও আঁশ ধরনের খাবার খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়। পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
আর প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যকৃতের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
দ্যা ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত দুটি গবেষণার ভিত্তিতে ‘ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন- ফাস্ট ফুড, মোড়কজাত বেইক করা খাবার, সোডা পানীয়, ক্যান্ডি ইত্যাদি খাবার উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এমনকি হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই খাবারগুলোর সঙ্গে ‘নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ (এনএএফএলডি)’র সংযোগ রয়েছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডেমিয়োলজি’তে প্রকাশিত চীনের ‘তিয়ানজিন ইউনিভার্সিটি জেনারেল হসপিটাল’য়ের গবেষকদের করা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া এই ধরনের রোগের জটিলতা বাড়ায়।
এসব খাবার যকৃতে চর্বি মাট বাঁধার সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ রক্তে অতিরিক্ত চর্বি বা অতিরিক্ত ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’য়ের কারণে ‘এনএএফএলডি’ দেখা দিতে পারে।
যা মূলত পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেইট, স্যাচুরেইটেড ফ্যাট এবং বাড়তি চিনি ধরনের খাবারের কারণে বৃদ্ধি পায়। আর এই সবগুলো উপাদানই অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চ মাত্রায় পাওয়া যায়।
ইসরায়েলের ‘ইউনিভার্সিটি অফ হাইফা’, ‘তেল আভিভ মেডিকেল সেন্টার’ ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন’য়ের গবেষকদের পর্যবেক্ষণ থেকে ‘লিভার ইন্টারন্যাশনাল’য়ে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, অতিরিক্ত উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া সাধারণত সুস্থ অংশগ্রহণকারীদের বিপাকীয় সমস্যা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও, যাদের ‘এনএএফএলডি’ ছিল তাদের জন্য উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার যকৃতের গুরুতর প্রদাহ ‘নন-অ্যালকোহলিক স্টেটো-হেপাটাইটিস’য়ের ঝুঁকি বাড়ায়।
যে সকল খাবার খাওয়া উপকারী
যকৃত সুস্থ রাখতে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের মাত্রা কমাতে হবে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘মেডিটেরিয়ান’ খাদ্যাভ্যাস যকৃতের জন্য উপকারী।
‘আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেডিটেরিয়ান খাদ্যাভ্যাস এনএএফএলডি রোগের ঝুঁকি কমায়।
এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস যকৃতকে সার্বিকভাবে সুস্থ রাখে। আর ‘এনএএফএলডি’ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে যকৃতের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
মেডিটেরিয়ান খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে দানাদার শস্য, ফল, সবজি, জলপাই এবং চর্বিবহুল মাছ খেতে হবে। আর যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াজাত খাবার, বাড়তি চিনি ও প্রক্রিয়াজাত শস্য- খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।