যত্নে থাকুক বই বন্ধু


সুস্মিতা রায় | Published: January 17, 2023 16:32:41 | Updated: January 18, 2023 17:03:56


যত্নে থাকুক বই বন্ধু

বই মানুষের সবথেকে ভালো বন্ধু, যে কভু ঠকায় না, নিঃশেষে দান করে জগতের জ্ঞান সম্ভার। মানুষের সুখে দুঃখে সে চমৎকার সঙ্গ দিয়ে যায়, নিয়ে যায় স্বপ্নিল জগতে। 

দিনরাত যার মায়াভরা সঙ্গে কেটে যাচ্ছে তার একটু যত্ন না হয় নেয়াই যায়! তাহলে বইটি ভালো থাকবে বহুকাল। সব বইয়েরা মিলে গড়ে উঠবে সাংঘাতিক সুন্দর ব্যক্তিগত সংগ্রহ কিংবা ঠাঁই পেতেও পারে কোনো পাঠাগারের তাকে, যাতে করে আরো অনেকেই সেই বইয়ের মায়ার পরশ পেতে পারে।

এবার রইল বই যত্নে রাখার উপায়–

যত্নে বইয়ের তাক

বই রাখতে সবার আগে বেছে নিতে হবে ভালো তাক, সেটা হতে পারে দেয়ালের সাথে কাঠের তাক কিংবা আলমারি। কাঁচ টানা আলমারি হলে ভালো, এই আদরের বইগুলি দেখাও যাবে আবার ধুলোও লাগবে না। আলমারি আলো বাতাস আছে এমন জায়গায় রাখাই ভালো। দেয়ালের তাক হলে খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন সরাসরি দেয়ালের সাথে না লেগে থাকে, এতে করে দেয়ালের রং-চুন বইয়ে লেগে যেতে পারে, আবার দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাবে বইয়ে ছত্রাক জমা হতে পারে। বইগুলো সুন্দর আর ভালো রাখতে সুন্দর কাপড় বিছিয়ে নেয়া যেতে পারে। এতে জায়গাটা দৃষ্টিনন্দন লাগবে। আবার সাইড টেবিলে বা কর্ণারে বই রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শোভা বর্ধনে ব্যবহার করা যেতে পারে কুশি কাজের রানার। 

সাজানো হোক রঙে ঢঙে 

সারি সারি করে বই সাজিয়ে রাখার সেভাবে কোনো নিয়ম হয়তো নেই, কিন্তু যদি একটু সুবিন্যস্ত থাকে, তাহলে হয়ত দরকারের বইটি সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে। এই জন্য যেটা করা যেতে পারে বইগুলি হয় বিষয় ভিত্তিক নয়তো লেখকদের নামে সাজানো যেতে পারে। ব্যাপারটা খানিকটা নান্দনিক করতে একই রঙের বইগুলি একসঙ্গে সেড মিলিয়ে রাখা যেতে পারে। ভারি বই আর চিকন বই গুলি আলাদা করে রাখতে হবে।

 à¦¬à¦‡à§Ÿà§‡à¦°à¦¾ খানিক রোদ পোহাক

নাড়াচাড়া না করলে কোনো বই দীর্ঘ দিন পরে খুললে বই থেকে যেমন বাজে গন্ধ করে, তেমনি হয় পোকার আবাদ। এই থেকে বাঁচতে আবার বইয়ে ছত্রাক পড়ে যাতে ভ্যাপসা ভাব না ধরে যায়, তাই একটু কড়া রোদের দিন দেখে বইগুলি নিয়ে যাওয়া হোক ছাদে। একটা শুকনো পাটি বিছিয়ে দিয়ে তাতে বইগুলি শুইয়ে দিয়ে মাঝে একবার উল্টে নিলেই হবে বইদের রোদ পোহান। এতে বইয়ের দূষক জীবাণুগুলো সূর্যের তাপে মারা পড়বে, বই ভালো থাকবে অনেকদিন।

বইয়ে পড়ুক মলাট

বইয়ের আয়ু বাড়াতে পারে ভালো মলাট। এজন্য যত্ন করে বাইরে থেকে আলগা কাগজে মলাট পরিয়ে নেয়া যেতে পারে। বই নতুনের মতো ভালো থাকবে বহুকাল। অনেকের কাছেই আবার বই পড়তে পড়তে তার সুন্দর প্রচ্ছদ দেখে নিতেও ভালো লাগে। তো বিড়ম্বনা এড়াতে স্বচ্ছ সেলোফোন কাগজ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

বুকমার্কের ব্যবহার

একটা বাজে অভ্যেস হলো বই পড়তে থেমে গিয়ে চিহ্ন রাখতে বইয়ের পাতা মুড়িয়ে রাখা। এতে কিন্তু ওই পাতায় পড়ে যেতে পারে চিরস্থায়ী ভাঁজ, যা দেখতে খারাপ লাগে। তো এই ভাঁজ না ফেলে বুকমার্ক ব্যবহার করাই সমীচীন। আর বইয়ে কোনো অযাচিত দাগ ফেলা যাবে না।

পড়তে পড়তে খাওয়া নয়

খাওয়া হাতে নিয়ে একদম বই পড়া যাবে না। এতে অসাবধানে তেল ঝোল লেগে যাবে বইয়ে। আর ভেজা হাতেও বই পড়া যাবে না। বইয়ের পৃষ্ঠা তো এসবে নষ্ট হয়ই আর সত্যিকারের পোকারা পায় আক্রমণের সংকেত। 

বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে টোটকা

পোকাদের থেকে বইকে বাঁচাতে আছে ঘরোয়া টোটকা। বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে টুকরো টুকরো নিমপাতা রেখে দেয়া যেতে পারে। এছাড়া ছোট ছোট কাপড়ে কর্পূর বেঁধে অথবা ন্যাপথালিন বইয়ের আলমারিতে ফেলে রাখা যায়। 

যদি পড়তে গিয়ে ছিঁড়ে যায় বই

বই তাক হতে নামাবার সময় বুকস্পাইনের মাঝ বরাবর ধরে নামাতে হবে, উপর থেকে টানলে পুরোটা ছিড়ে আসতে পারে। ভারী বই পড়ার সময় নিচে কুশন জাতীয় কিছুর রেখে পড়া ভালো, এতে বাঁধাই অটুট থাকবে। পাতা ওল্টাতে গিয়ে  পৃষ্ঠা ছিড়ে এলে কখনোই আঠায় লাগাতে নেই, নইলে যে সিলভারফিশ পোকাদের নেমন্তন্ন করা হয়। যারা বই বাঁধাই করেন, তাদের পরামর্শ পাতা ছিঁড়লে জুড়তে হবে স্বচ্ছ স্কচটেপে। 

 à¦¬à¦‡ হাতে নিয়ে পড়ার রসবোধটা ভিন্নরকমই।

আজকাল প্রযুক্তির ভিড়ে কিন্ডলের ইবুক রিডারের রাজ্যত্বেও হারিয়ে যায়নি বই। একটু আদর যত্নে বইগুলি রয়ে যাবে আরো অনেক দিন, ভাবী কালের কোনো পাঠকের জন্যে।

সুস্মিতা রায় বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

susmi9897@gmail.com

Share if you like