নিজের বক্তব্য ‘ভুলভাবে’ গণমাধ্যমে আসছে দাবি করে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের ‘অপরিপক্ব’ বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তার ভাষ্যে, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা যারা করেন, তাদের মধ্যে ‘দুর্বলতা’ আছে, ‘অপরিপক্বতা’ আছে।
সম্প্রতি ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার গোপালগঞ্জে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
মোমেন বলেন, “গত ২৬ তারিখ প্রেস ক্লাবে কলামিস্টদের একটি অনুষ্ঠান ছিল। ১৭টি গণমাধ্যম তা নিয়ে যে হেডলাইন করেছে, তার সাথে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের সম্পর্ক নাই। হেডলাইনগুলো বলেছে, আমেরিকা যুদ্ধবাজ, অমুক-তমুক, এমন কথা আমার মুখেও আসে নাই।
“কিন্তু ১৭টা মিডিয়া এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে,বানোয়াট ও কাল্পনিক। মনে হয়, আমাদের দেশে সাংবাদিকতা যারা করেন, তাদের পরিপক্বতা দরকার। আপনারা সেভাবে সজাগ হলে পরে আমি খুব খুশি হব “
তিনি বলেন, “যে জিনিসগুলোর ধারে কাছে বলি নাই, সেগুলো সাংবাদিকরা প্রকাশ করেছেন। তারা কোন উদ্দেশ্যে মিথ্যা প্রচারণা করছেন?
“তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনে করবে, আমরা বোধ হয় তাদের শত্রু। এমনভাবে প্রচারণা করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে শত্রু বানানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে। খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাম্প্রতিক সময়ে এর আগে তার কয়েকটি বক্তব্যের জন্য সমালোচনায় পড়েছিলেন।
ভারত সফরে গিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার সুপারিশ করেছিলেন বলে চট্টগ্রামে তার দেওয়া বক্তব্য ঘিরে তুমুল সমালোচনা ওঠে।
এরপর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশে ‘আমরা সুখে আছি, বেহেস্তে আছি’ মন্তব্যও সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছিল।
এনিয়ে নিজের দলের মধ্যেও সমালোচনার পর মোমেন বলেছিলেন, আগামীতে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সাবধান’ হবেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার বিসিএস (এফএ) অ্যাম্বাসেডরসের (এওফা) সদস্যদের নিয়ে শনিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান মোমেন। সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে তার কথা হয়।
সাংবাদিকদের দুষে তিনি আরও বলেন, “আপনাদের (গোপালগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিক) জন্য দুঃখের বিষয় যে আপনাদের সহকর্মীরা এই ধরনের বানোয়াট জিনিস প্রকাশ করেছেন।
“আমি অনেক সাংবাদিকদের বলেছি, আপনাদের এই নিয়ে গবেষণা করা উচিত। কেন এতো নিম্ন মানের এই সাংবাদিকতা। এইটা আপনাদের জন্য দুঃখের বিষয়।”
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, “যারা বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তারা অত্যন্ত সম্মানীত মানুষ । আমাদের দেশকে প্রেজেন্ট করেছে বহু দেশে। তাদের অ্যাসোসিয়েশনের ৮০ জনকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি।
“তারা চাকরি জীবনে দেশের জন্য কাজ করেছেন। অবসরে গিয়েও তারা কাজ করে চলেছে। এজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
মন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে সাবেক রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে দোয়া ও মোনাজাত করেন তিনি।
তার সঙ্গে এসময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন , পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার বিসিএস (এফএ) অ্যাম্বাসেডর্সের (এওফা) প্রেসিডেন্ট শমসের মবিন চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হাসান।
গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মুন্সি আতিয়ার রহমান, জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক একেএম হেদায়েতুল ইসলাম, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেদারুল ইসলাম, পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম এসময় উপস্থিত ছিলেন।