ডিসেম্বরে উদ্বোধন হতে যাওয়া ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলে চড়তে সর্বনিম্ন ভাড়া গুনতে হবে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো দূরত্ব ভ্রমণে খরচ হবে ১০০ টাকা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর।
মঙ্গলবার উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপো অঞ্চলে মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাড়ার এই তথ্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা।
“পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করবেন। এই অংশের ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাকি কাজ ও উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ সেরে নেওয়া হচ্ছে।”
মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন মূল উদ্বোধনেরই একটি ‘অনুষঙ্গ’ বলেও জানান কাদের।
মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের নির্মাণ কাজ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, “পরের বছর ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থাৎ সরকারের এই মেয়াদেই কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা রাখছি।”
যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধরা বিনামূল্যে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন বলেও জানান মন্ত্রী।
- চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের যাত্রা উদ্বোধন করবেন
- উদ্বোধনের পর শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে চলবে মেট্রোরেল
- আগামী বছর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের নির্মাণ কাজ শেষে পুরো পথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে
শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ছাড় থাকবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, যদি হয়, তাহলে পরে জানান হবে।”
তবে শিক্ষার্থীরা উত্তরায় মেট্রোরেলের প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্র বিনামূল্যে ঘুরে দেখার সুযোগ পাবে জানিয়ে কাদের বলেন, মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা ও টিকেট কাটার পদ্ধতিসহ যাবতীয় তথ্য জানার ব্যবস্থা রয়েছে প্রদর্শনী কেন্দ্রে।
“ভাড়ায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যও ছাড়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া সাপ্তাহিক, মাসিক ও পারিবারিক কার্ড নিলেও ভাড়ায় সুবিধা পাওয়া যাবে।”
মেট্রোরেলের কাজ শুরুর আগে উত্তরা ডিপো এলাকায় প্রথম পরিদর্শনের স্মৃতি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমারা যখন প্রথম এসেছিলাম তখন দাঁড়াবার মত জায়গা ছিল না। ওইদিন হঠাৎ ঝড় উঠল, তারপর শুরু হল বৃষ্টি। ওই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান করতে হয়েছিল সেদিন। এখন এটা একটা মেট্রো নগরীতে রূপ নিয়েছে।”
অনুষ্ঠানে কাদের দেশের সবচেয়ে বড় যোগাযোগ প্রকল্প ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি লাইন-১ নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-১ এর মাধ্যমে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুল স্টেশন পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
“এই ৩১ কিলোমিটারের মধ্যে ২১ কিলোমিটার পথ হবে পাতাল রেল এবং বাকি ১০ কিলোমিটার এলিভেটেড করা হবে।”
এই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে জানিয়ে একই সময়ের মধ্যে সরকার এমআরটি-২, এমআরটি-৪ এবং এমআরটি-৫-সহ মোট ছয়টি লাইন করতে চায় বলেও সেতুমন্ত্রী জানান।
মন্ত্রী বলেন, “রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি মানুষের চলাচল সুবিধায় এসব যোগাযোগ কঠামো গড়ে তোলা হবে। তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন সরকার সত্যি করবে।”
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইকো নওকি, জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইয়োহো হায়াকাওয়া, ঢাকা ম্যাস ট্রান্সিট কোম্পানির এমডি এমএএন ছিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড আগেই জানিয়েছিল, প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রো রেলে যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছিলেন, শুরুতে প্রতি দশ মিনিট পরপর ট্রেন ছাড়া হবে। সেজন্য মোট ১০ সেট ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতিটি সেটে মোট ৬টি বগি থাকছে। ঢাকার যাত্রীরা কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে উঠলে এবং যাত্রী বেড়ে গেলে এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের বিরতি কমিয়ে আনা হবে।
মেট্রোরেলের আওতায় চারটি স্টেশন প্লাজা এবং একটি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থাকবে। এছাড়া টার্মিনাল স্টেশনগুলোয় লম্বা সময়ের জন্য গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকছে।
আগারগাঁও এবং উত্তরা থেকে বিভিন্ন রুটে মেট্রো রেলের যাত্রী পরিবহনের জন্য বিআরটিসির সঙ্গে একটি চুক্তিও করছে কর্তৃপক্ষ।