মেট্রোরেল দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেক পালক: শেখ হাসিনা


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: December 28, 2022 16:10:04 | Updated: December 28, 2022 23:19:40


মেট্রোরেল দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেক পালক: শেখ হাসিনা

দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম, ঢাকাবাসীকে আরেকটি পালক সংযোজিত করতে পারলাম।”

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘হবে জয়’ কবিতার চরণ উদ্ধৃত করে সরকারপ্রধান বলেন, “অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায় পিছে চাব কোন মতে!”

সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সুধী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রথমে ফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সুধী সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তৃতা করেন তিনি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

কবি নজরুল ইসলামের কবিতাংশের সঙ্গে যুক্ত করে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এগিয়ে যাব আমরা দুর্বার গতিতে, এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সকল বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”

২০১৬ সালে ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই লাইনের নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি-৬।

উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল হলেও শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে বৃহস্পতিবার থেকে মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন সাধারণ মানুষ। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি কাটিয়ে খুব অল্প সময়েই এই রুটে চলাচলের দুয়ার খুলছে ঢাকাবাসীর।

জনগণকে নিয়ম মেনে পরিচ্ছন্নভাবে মেট্রোরেল ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “একটা অনুরোধ থাকবে, অনেক টাকা খরচ করে এই মেট্রোরেল করা হয়েছে। এটাকে সংরক্ষণ করা, এটার মান নিশ্চিত রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা- এই সবকিছু কিন্তু যারা ব্যবহার করবেন তাদের দায়িত্ব।

“এখানে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার হয়েছে। এই সমস্ত জিনিস যেন নষ্ট না হয়। ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলে যত্নবান হবেন। খেয়াল রাখবেন কেউ যেন আমাদের রেল স্টেশনগুলিতে আবর্জনা-ময়লা না ফেলে, অপরিচ্ছন্ন করতে না পারে- সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।”

সরকারপ্রধান বলেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সুন্দরভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা ব্যবহার করার জন্য আমি সবাইকে আন্তরিক আবেদন জানাচ্ছি, অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাব, যদি আপনারা কথাগুলি মেনে চলেন।”

মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামালায় নিহত জাপানি নাগরিককে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের ওই ঘটনার পর মেট্রোরেলের কাজ পুনরায় চালু করার পেছনে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র যে ভূমিকা, তাও স্মরণ করেছেন শেখ হাসিনা।

জাপানি নাগরিকদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের স্মৃতি যেন স্মরণে থাকে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ঢাকার মেট্র্রোরেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের কিছুদিন পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হন।

ওই হামলায় মোট ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। দুই নারীসহ সাত জাপানি নাগরিকের মধ্যে ছয় জন ছিলেন দুটি মেট্রো রেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।

গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত এমআরটি-১ এবং নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর গাবতলী, ধানমণ্ডি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতিরঝিল লিংক রোড পর্যন্ত এমআরটি-৫ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা।

ওই হামলার পর জাইকা ও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদুতসহ বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা বেশির ভাগ জাপানি নিজ দেশে ফিরে যান। পরে বাংলাদেশের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেপ্টেম্বরে জাপানিদের ফিরিয়ে আনা হয়।

চলতি বছরের জুলাইয়ে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রো রেল ডিপোতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে সরকার। তাদের নির্মম প্রাণক্ষয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

চলতি বছর ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারানো শিনজো আবের ভূমিকা কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই ঘটনার পর কিছুদিনের জন্য কাজ বন্ধ ছিল; তার নির্দেশে আবার কার্যক্রম শুরু হয়।”

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের পর টিকেট কেটে মেট্রোরেলের যাত্রী হন। এর আগে তিনি অবতীর্ণ হন গার্ডের ভূমিকায়। সবুজ পাতাকা নেড়ে মেট্রো ট্রেন চলাচলের সবুজ সংকেত দেন, তারপর সেই পতাকায় স্বাক্ষরও করেন সরকারপ্রধান। সঙ্গী যাত্রীদের নিয়ে মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পৌঁছান তিনি।

Share if you like