মেটাভার্সে সম্ভাব্য বিভিন্ন অপরাধ ঠেকানোর উপায় তৈরিতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল।
মেটাভার্স নিয়ে তুমুল আলোচনা চললেও এখনও এটি পুরোপুরি বোঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। তবে, এই ধারণার সহায়তায় ভবিষ্যতে অনলাইনে মানুষের ৩ডি অ্যাভাটার দেখা যাবে জনপ্রিয় ধারণা রয়েছে।
এদিকে, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) স্পেস তৈরি করেছে ইন্টারপোল নিজেও। এতে ব্যবহারকারীরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন ভার্চুয়াল মিটিংয়ে যোগ দিতে পারবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল জার্গেন স্টক বলেন, এই খাতে সংস্থাটির নিজের পিছিয়ে না থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“অপরাধ ঘটানো যায়, এমন যে কোনো নতুন প্রযুক্তিগত সরঞ্জামের সঙ্গে খুব দ্রুতই মানিয়ে নেওয়ার বিষয়ে অপরাধীরা বেশ অত্যাধুনিক ও পেশাদার।” --বলেন তিনি।
“এর জন্য আমাদেরও পর্যাপ্ত সাড়া দিতে হবে। কখনও কখনও আইন প্রণেতা, পুলিশ এমনকি আমাদের সমাজও কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে।”
এই ভার্চুয়াল পরিবেশে কেবল নিরাপদ সার্ভারের মাধ্যমে প্রবেশ করা গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও মেটাভার্স অভিজ্ঞতায় অংশ নিতে পারেন। ফলে, এতে কী ধরনের অপরাধ ঘটতে পারে বা এগুলো কীভাবে সরানো যেতে পারে, ওই বিষয়ে ধারণা মিলবে।
মেটাভার্স কী?
অনেকেই মনে করছেন, মেটাভার্স হতে পারে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ।
এই বিষয়ে প্রচলিত এক ধারণা হলো, ভিআর-এর কাছে ব্যবহারকারীর আধুনিক স্মার্টফোনও ৮০’র দশকের প্রথম স্থুলাকৃতির মোবাইল ফোনের মতো বিবেচিত হতে পারে।
বিবিসি বলছে, কোনো কম্পিউটারে থাকার বদলে মেটাভার্সের ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশের জন্য ব্যবহারকারীকে হেডসেট ব্যবহার করতে হবে, যা সব ধরনের ডিজিটাল পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
এখনও ধারণা পর্যায়ে থাকায় মেটাভার্সের কোনো একক স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই।
আরও সহজ করে বললে, ভার্চুয়াল জগৎকে মেটাভার্স বলা অনেকটা গুগলকে ইন্টারনেট বলার মতো শোনায়।
ফলে, ইন্টারপোল কীভাবে মেটাভার্সের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করবে, যদি এর অস্তিত্বই না থাকে? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বিবিসি বলছে, এখানেই বিভিন্ন ভার্চুয়াল জগৎ কাজে লাগতে পারে। তবে, এইসব ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে বাস্তব জীবনের সমস্যাও ছিল।
২০২২ সালে বিবিসির অনুসন্ধানে বিভিন্ন ভিআর গেইমে মৌখিক ও যৌন হয়রানির মতো বিষয়গুলো উঠে আসে। সে সময়, একে ‘বিরক্তিকর’ বলে আখ্যা দেন এক সংবাদকর্মী।
গত বছরের শেষে এক দল ‘ক্যাম্পেইনার’ বা প্রচারক জানায়, মেটার ভিআর প্ল্যাটফর্ম ‘হরাইজন ওয়ার্ল্ডস’-এ এক ২১ বছর বয়সী গবেষকের অ্যাভাটারের ওপর যৌন নিপীড়ন চালানো হয়েছে।
মেটাভার্স অপরাধ কী?
ইন্টারপোলের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. মাদান ওবেরয় বলেন, কোনো মেটাভার্স অপরাধ সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে কিছু বাধা আছে।
“এমন কিছু সংখ্যক অপরাধ আছে, যেখানে আমি জানি না এগুলো এখনও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে কি না।”
“উদাহরণ হিসেবে, যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটেছে এখানে।”
“আপনি যদি বাস্তব জগতের বিভিন্ন অপরাধকে মেটাভার্সেও অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন, তবে সমস্যা আছে।”
“আমরা জানি না এগুলোকে অপরাধ ডাকা যায় কি না। তবে, এমন হুমকি অবশ্যই আছে। ফলে, এখনও এগুলোর সমাধান করা বাকি।”
তিনি বলেন, ইন্টারপোলের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো এইসব সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।
“আমার বহুল ব্যবহৃত উদাহরণ হলো, আপনি যদি ডুবন্ত ব্যক্তিকে বাঁচাতে চান, তবে আপনার সাঁতার জানতে হবে।” --বলেন তিনি।
“একইভাবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মেটাভার্সে আক্রান্ত লোকজনকে সহায়তা করতে চাইলে তাদের মেটাভার্স সম্পর্কে জানতে হবে।”
“আর এটিই আমাদের অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও মেটাভার্স ব্যবহার করে এর সম্পর্কে জানতে পারবেন।
“সে ক্ষেত্রে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
মেটাভার্সে নিয়ন্ত্রণ ও তদন্ত ব্যবস্থা
এই ভার্চুয়াল জগৎ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে মেটাভার্স গবেষণা সংস্থা ‘কাবুনি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নিনা জেন বলেন, “যেগুলো বাস্তব জগতে অবৈধ ও ক্ষতিকারক, সেগুলো ভার্চুয়াল জগতেও অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিৎ।”
"অভিন্নতার এই রাজ্যে, একে অপরের সঙ্গে ভার্চুয়াল জগতে নির্দিষ্ট উপায়ে আচরণ করলে আমরা বেশ জটিল অবস্থানে থাকব। তবে, বাস্তব জগতে নয়।”
আর স্টক বলেন, ভবিষ্যতে মেটাভার্সের বিভিন্ন অপরাধ শনাক্তে ইন্টারপোল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
“মাউসের এক ক্লিকেই প্রমাণ চলে যায় অন্য মহাদেশে। আর সাইবার অপরাধ প্রকৃতিগতভাবেই আন্তর্জাতিক হিসেবে বিবেচিত।”
“এর জন্যই ইন্টারপোল এতটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সাইবার অপরাধ কেবল জাতীয় পর্যায়ে ঘটে না, বরং প্রায় সকল ঘটনাতেই আন্তর্জাতিক মোড় আছে।”
“তাই এটি তৈরির প্রায় একশ বছর পরও ইন্টারপোলের ভূমিকা থাকবে। কারণ একা কোনো দেশের পক্ষে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব নয়।”
“এজন্যই ইন্টারপোলে প্রায় একশ ৯৫টি সদস্য দেশ আছে। এই ধরনের অপরাধ ঠেকাতে তাদের সকলের ভূমিকা প্রয়োজন।”