স্বভূমিতে প্রত্যাবাসনের পক্ষের রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার শুনানির সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এক আসামি সাক্ষীকে 'ইশারায় গলা কেটে হত্যার' হুমকি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মঙ্গলবার কক্সবাজারের অতিরিক্ত দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে এ ঘটনা ঘটে বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ফরিদুল আলম জানান।
তবে তিনি আসামির নাম উল্লেখ করেননি।
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার ১-ইস্ট লম্বাশিয়া ক্যাম্পে ৪৮ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে একদল অস্ত্রধারী।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সোমবার মামলার বাদীর সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে আদালতে প্রথম দফায় সাক্ষ্য প্রদান শুরু হয়।
দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দুজন সাক্ষ্য প্রদান করেন। তারা হলেন- নূরে আলম ও হামিদ মাঝি।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলে এই সাক্ষ্যগ্রহণ। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করেন। এর আগে সকালে এই মামলায় কারাগারে থাকা ১৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, “নূরে আলম ও হামিদ মাঝি এ মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। ঘটনার দিন কাকে কাকে দেখেছেন, কারা গুলি করেছেন এসব বর্ণনা দিয়েছেন। বুধবার এ মামলার আরও কয়েকজন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।“
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, "সাক্ষী নূরে আলম যখন আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন তখন এক আসামি হাতের ইশারায় তাকে গলা কেটে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। বিষয়টি নজরে আসার পর আদালতের কাছে অবহিত করা হয়েছে।”
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মামলার বরাতে আইনজীবী জানান, দীর্ঘ সাড়ে আট মাস তদন্ত শেষে হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দীন ১১ সেপ্টেম্বর ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ৩৮ জনের নাম ও ঠিকানা সাক্ষীর তালিকায় রয়েছে।
মুহিবুল্লাহ ছিলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামের রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
বেশ কয়েকবছর আগে জীবন বাঁচাতে নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে সপরিবারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হন মুহিবুল্লাহ। সেখানেই গড়ে তোলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)।
বর্তমানে মুহিবুল্লাহর পরিবারের ২৫ জন সদস্য কানাডায় বসবাস করছেন। তবে মামলার বাদী মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বর্তমানে কড়া নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই অবস্থান করছেন।