ছয় সপ্তাহ আগে নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরান জুড়ে যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলেছিল তা হাজার গুণ তীব্র হয়েছে তার চল্লিশার রাতে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে মারা যান মাশা। তার তিনদিন আগে ভাইয়ের সঙ্গে তেহরান গিয়ে নীতি পুলিশের হাতে আটক হন ২২ বছরের কুর্দি এই তরুণী। হিজাব ঠিকমত না পরার অপরাধে পুলিশ তাকে আটক করে এবং তার মাথায় এত বেশি আঘাত করে যে তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন।
হাসপাতালে তিনদিন কোমায় থাকার পর মাশা মারা যান। পুলিশের দাবি, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।মাশার মৃত্যুর পরদিন তার দফনের সময় তার শহর সাকেজে যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলেছিল তা এখন পুরো ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বিবিসি জানায়, বুধবার ইরানের সব বড় বড় নগরীতে হাজার হাজার মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছে। এমনকী সরকারের দমন-পীড়নের কারণে যেসব নগরীতে বিক্ষোভ স্তিমিত হয়ে এসেছিল সেখানেও এদিন অনেক বিক্ষোভকারী সড়কে নেমেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ক্ষমতাসীনদের এতবড় গণআন্দোলনের মুখে পড়তে হয়নি।বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে জানায় নরওয়ে ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস। নিহতদের মধ্যে ২৯ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
ইরান সরকার বলছে, তাদের শত্রু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই বিক্ষোভে ইন্ধন যোগাচ্ছে।বুধবার রাতের বিক্ষোভের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেগুলোর সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি।
রাজধানী তেহরানের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সড়কে আগুন জ্বলছে। শত শত মানুষ নগরীর একটি প্রধান সড়কে মিছিল করছে এবং ‘স্বৈরাচারের পতন চাই’ স্লোগান দিচ্ছে। তারা মূলত ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পতন চাইছে। মাশা মৃত্যু ঘিরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পরে খামেনির পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়।
পশ্চিমের নগরী আন্দিমেশক ও বরুজের্দ, উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের কাছে নগরী লাহিজানসহ আরো বেশ কয়েকটি নগরীতে বুধবারের বিক্ষোভে ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে।
রাতের বিক্ষোভের আগে বুধবার দিনের বেলায় পুরো কুর্দিস্তান প্রদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ সাকেজ শহরে মাশাকে যেখানে করব দেয়া হয়েছে ওই কবরস্থানে জড়ো হয়েছিল।
মাশার চল্লিশা উপলক্ষ্যে বিক্ষোভ পুনরায় উস্কে উঠতে পারে আশঙ্কায় ইরানি কর্তৃপক্ষ বুধবার সাকেজ শহরে প্রচুর দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করে। এমনকী মাশার পরিবারকে চল্লিশার আয়োজন না করতে প্রশাসন থেকে হুমকিও দেয়া হয় বলে জানায় একটি মানবাধিকার সংগঠন।
ইসলাম ধর্মে সাধারণত কারো মৃত্যুর ৪০দিন পর তার স্মরণে শোক প্রকাশের জন্য বিশেষ আয়োজনকে চল্লিশা বলে।মাশার পরিবার থেকে অবশ্য এদিন কোনো আয়োজন ছিল না। বরং সাধারণ মানুষ নিজেরাই বিক্ষোভ মিছিল করে মাশার কবরের কাছে জড়ো হন।
ওই ভিড় লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছুড়ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে দাবি করেছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। তেহরানের কাছের কারাজ শহরে বুধবার বিক্ষোভে আসা ২৭ বছরের এক নারী বিবিসি পার্সিয়ানকে বলেন, ‘‘পুরো সমাজ ক্ষোভে ফুঁসছে। তাদের (ইরানের নেতাদের) কারণে আমাদের যথেষ্ট ভোগান্তি সইতে হয়েছে।
“আমি ওই সমস্ত মানুষদের না বলার অধিকার চাই। নিজ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত। এর কারণ, আমি একজন নারী। পুরুষরাও শাসকদের ভয় পেতে পেতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
“আমাদের দেশের ইতিহাসে এই প্রথম আমরা নারী, জীবন এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি।”