আওয়ামী লীগ শাসনামলের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা; তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল নির্বাচন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা তার দলই এনেছে।
শেখ হাসিনা একই সঙ্গে বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকায় ক্ষমতায় থাকতে তাদের ভোট চুরি করতে হয় না। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
নির্বাচনের আগের বছরে শনিবার আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা সারাদেশ থেকে এসে জড়ো হন। এই সম্মেলনেই আগামী নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলার বার্তা নিয়ে যাবেন তারা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসনামলে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন মানেই ছিল, আমরা যেটা বলতাম ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা।”
খালেদা জিয়ার শাসনকালে ‘এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার’ তৈরির কথাও বলেন তিনি।
সেই অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগই গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, “ভোট দেওয়ার যে সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু আমরা সেটা করেছি।”
নির্বাচন সংস্কারে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও মহাজোটের প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি এক্ষেত্রে ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবদানও স্বীকার করেন।
“যাতে কেউ ভুয়া ভোট দিতে না পারে সেইজন্য ছবিসহ ভোটার তালিকা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর যে কাজই করুক, আমাদের জেল খাটাক, যাই করুক, তারা অন্তত সেই প্রস্তাবের কিছু কাজ বাস্তবায়ন করে গেছে।”
এরপর আওয়ামী লীগের শাসনকালে নেওয়া আরও নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
“স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ওই সিল মেরে আগেই ব্যালট বাক্স ভরবে, সেটা যেন না পারে, যে কেউ ভোট দিতে গিয়ে যেন দেখতে পারে সেখানে আগে থেকে ভোট ভরা আছে কিনা, সে জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এখন এটা চালু করা হয়েছে।”
ইভিএম চালুর প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে কিন্তু কারচুপি করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা সেটা জানি না।”
নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়টি তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই আইন মোতাবেকই মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করছে। সেখানে আমরা আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করি না। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি।
“আগে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সক্ষমতা নিজস্ব ছিল না, সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এটা রাখা ছিল। আমরা সেটা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এই আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে আমরা দিয়ে দিয়েছি। বাজেট থেকে সরাসরি তাদেরকে টাকা দেওয়া হয়।”
নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকত, তাহলে খালেদা জিয়ার মতো ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতাম। তা তো আমরা করি নাই। আমাদের জনগণের উপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। আমরা সেই বিশ্বাস নিয়েই চলি।”
দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, “দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আর আমি চার চারবার প্রধানমন্ত্রী।
“আমাদের পরিবার দুর্নীতিই যদি করত, তাহলে আর দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি। মানুষের জন্য করতে এসেছি। এ কারণেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, এটা অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে এটা মেনে নিতে পারি না।”
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “শুধু পদ্মা সেতু না। আজকে তিনটা এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের আওয়ামী লীগ সরকারের করা। চতুর্থটা হচ্ছে কক্সবাজার। সারাদেশে রাস্তা, ঘাট, পুল, ব্রিজ করে … কিছুদিন আগে ১০০টা সেতু, ১০০টা সড়কের উন্নতি। এটা আমরা করতে পেরেছি।”
করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও বলেন তিনি।