শিরোপা লড়াইয়ের আশা শেষ হয়ে গেলেও জয়ের ক্ষুধা যে মেটেনি, তা শুরু থেকেই ফুটে উঠল দুই দলের পারফরম্যান্সে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে যেতেই পাল্টা আঘাত হানল মরক্কো। তাদের টানা আক্রমণের মুখেই দারুণ এক গোলে ফের এগিয়ে যাওয়ায় ক্রোয়াটরা কাতার বিশ্বকাপ শেষ করল তৃতীয় হয়ে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেছে ক্রোয়েশিয়া।
১৯৯৮ আসরেও তৃতীয় হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া, সেবার স্থান নির্ধারণী ম্যাচটিতে নেদারল্যান্ডসকে একই ব্যবধানে হারিয়েছিল তারা। আর চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে রানার্সআপ হয় ক্রোয়েশিয়া, বিশ্ব সেরার মঞ্চে সেটাই তাদের সেরা সাফল্য।
সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কোনোরকম প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ ক্রোয়েশিয়া হেরে যায় ৩-০ গোলে। এখানে ম্যাচ শুরু হতেই এগিয়ে যায় তারা। সপ্তম মিনিটে মদ্রিচের ফ্রি কিকে ফাঁকায় বল পেয়ে ইভান পেরিসিচ হেডে বাড়ান ছয় গজ বক্সের সামনে, আর ডাইভিং হেডে পোস্ট ঘেঁষে গোলটি করেন ডিফেন্ডার ইয়োস্কো গাভারদিওল।
আসর জুড়ে অবিশ্বাস্য সব পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া মরক্কো পাল্টা জবাব দিতে দুই মিনিটও দেরি করেনি। ডান দিকের সাইডলাইন থেকে হাকিম জিয়াশের ফ্রি কিক তেমন ভালো ছিল না, তবে বক্সের মুখে ডিফেন্ডার লভরো মাইয়ের হেডে ফেরাতে গিয়ে উল্টো বল পাঠিয়ে দেন গোল মুখে। সেখানে হেডেই সমতা টানেন আশরাফ দারি। জাতীয় দলের হযে এই ডিফেন্ডারের এটাই প্রথম গোল।
প্রতিপক্ষের চাপের মুখে ২৮তম মিনিটে জিয়াশের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় ভালো একটি আক্রমণ করে আশরাফ হাকিমি। ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে ছয় গজ বক্সে বল বাড়ান পিএসজি ডিফেন্ডার; কিন্তু একটু বেশি এগিয়ে ছিলেন ইউসেফ এন-নেসিরি।
প্রায় টানা ১৫ মিনিট আক্রমণে আধিপত্য করে সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হারা মরক্কো। এই সময়ে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে তারা; কিন্তু মেলেনি গোল।
এরপরই ৪২তম মিনিটে মিসলাভ অরসিচের দারুণ নৈপুণ্যে এগিয়ে যায় ক্রোয়াটরা। ডি-বক্সের মুখে মরক্কো বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে সতীর্থের পা ঘুরে বক্সের ডান দিকে পেয়ে যান অরসিচ। প্রথম ছোঁয়ায় নেন কোনাকুনি শট, বল দূরের পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়।
বিরতির পর মরক্কো আক্রমণে তেমন সুবিধা করতে পারছিল না। এই অর্ধের প্রথম ২৫ মিনিটে ক্রোয়েশিয়া কয়েকটি হাফ-চান্স পেলেও লক্ষ্যে শটই নিতে পারেনি তারা।
৭৪ ও ৭৫তম মিনিটে দুই প্রান্তে দুটি ট্যাকলের ঘটনায় পেনাল্টির জোরাল আবেদন ওঠে। তবে রেফারির সাড়া মেলেনি, ভিএআরও তেমন কিছু পায়নি। দ্বিতীয় ঘটনার আগমুহূর্তে দারুণ সুযোগ পান এন-নেসিরি। কিন্তু তার শট ঠেকিয়ে দলকে এগিয়ে রাখেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকভিচ।
৮৭তম মিনিটে সতীর্থের পাস ডি-বক্সে পেয়ে একজনকে কাটিয়ে কোনাকুনি শট নেন মাতেও কোভাচিচ। একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় বল, বেঁচে থাকে মরক্কোর আশা।
ছয় মিনিট যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহর্তে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেওয়ার নিশ্চিত সুযোগ পান এন-নেসিরি। তবে তার হেডে বল ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে গেলে নতুন কোনো ইতিহাস গড়ার আশা শেষ হয়ে যায় আফ্রিকার দেশটির।
বিশ্বকাপের শেষটা টানা দুই হারে হলেও মরক্কো বিদায় নিচ্ছে মাথা উঁচু করেই। আসরের প্রথম পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থাকার পথে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে ওঠা, স্পেনকে হারিয়ে প্রথম আরব দেশ হিসেবে কোয়ার্টার-ফাইনালে এবং পর্তুগালকে হারিয়ে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমি-ফাইনালে ওঠার ইতিহাস গড়ে ওয়ালিদ রেগরাগির দল।
এই ম্যাচ দিয়ে শেষ হলো ২০১৮ সালের বর্ষসেরা ফুটবলার, ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের সেরা ফুটবলারদের একজন লুকা মদ্রিচের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ার।