ভালো খাদ্যভ্যাসের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে মন মস্তিষ্ক থাকবে প্রখর।
একটা সময় মনে করা হত, মানুষের মস্তিষ্কের কোষে সংখ্যা নির্দিষ্ট এবং তা সময়ের সঙ্গে কমতে থাকে। ফলে একটা সময় মস্তিষ্ক তার কার্যক্ষমতা হারাবেই। যার মস্তিষ্কের কোষ যত দ্রুত ক্ষয় হবে তার মস্তিষ্ক অকেজো হবে ততই দ্রুত। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নের কল্যাণে জানা গেছে এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। কিছু খাবার আর জীবনযাত্রার অভ্যাসের সঙ্গে ‘নিউরোজেনেসিস’য়ের সম্পর্ক পাওয়া গেছে অসংখ্য গবেষণায়।
নিউ ইয়র্ক’য়ের মনো-চিকিৎসক ড্রিউ রামজি তার বই ‘ইট টু বিট ডিপ্রেশন অ্যান্ড অ্যাংজাইটি’তে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
যেভাবে ধ্বংস হয় মস্তিষ্কের কোষ
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, ডা. রামজি’র বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, উচ্চমাত্রায় এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ মস্তিষ্কের কোষ বা ‘নিউরন’কে ধ্বংস করে। তবে ক্ষনস্থায়ী এবং স্বল্পমাত্রার প্রদাহ আবার মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
অতিরিক্ত প্রদাহ মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীন ‘সার্কিট’গুলোর ক্ষতি করে এবং মস্তিষ্কের কোষগুলো ধ্বংস করে। একারণেই মাথা ঘোলাটে মনে হয়, মানসিক অস্বস্তি হয়, হতাশা জাগে, কর্মশক্তি কমে যায়।
দীর্ঘমেয়াদে তা ডেকে আনে জ্ঞানীয় ক্ষমতায় দূর্বলতা ও বিভিন্ন রোগ।
প্রতিনিয়ত মানসিক চাপ, প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত চিনি, মাংস ও ‘কার্বোহাইড্রেইট’ খাওয়া এবং ঘুমের অভাব মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করে।
যুক্তরাজ্যের ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটাল্স এনএইচএস ফাইন্ডেশন ট্রাস্ট’য়ের নিউরোলজিস্ট ড. ফেই বেগেটি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের কারণে থেমে যায় ‘নিউরোজেনেসিস’ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াতেই মূলত নতুন নিউরন তৈরি হয়। প্রদাহের কারণে মস্তিষ্ক আর রক্তের মধ্যকার আবরণে ছিদ্র হয়। প্রদাহ অনেকদিন ধরে থাকলেই কেবল এমনটা হওয়া সম্ভব।”
মস্তিষ্কে যেভাবে নতুন কোষ তৈরি হয়
বইতে ডা. রামজি ব্যাখ্যা করেন, “প্রদাহ কমানোর মাধ্যমেই এই কাজ হয়। একদিকে পুরানো কোষের ধ্বংস কমে, অন্যদিকে কোষের সংখ্যা বাড়ে, যদি কমানো যায় প্রদাহ। কোষের বৃদ্ধি বোঝার জন্য দুটি বিষয় বুঝতে হবে, ‘নিউরোজেনেসিস’ আর ‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’।”
‘নিউরোজেনেসিস’ হল, নতুন নিউরন তৈরির প্রক্রিয়া। আর ‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’ হল, যে নিউরন ইতোমধ্যেই আছে সেটার বৃদ্ধি এবং আশপাশের অন্যান্য নিউরন’য়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া।
এই প্রক্রিয়া প্রধানত আমাদের মস্তিষ্ককে আমাদের মতো করে ঘরে তোলে। অর্থাৎ আমাদের মেধা, রোগ থেকে সেরে ওঠা দুটোই নির্ভরশীল এই ‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’ প্রক্রিয়ার ওপর।
‘নিউরোজেনেসিস’ মস্তিষ্কের দুটি অংশে ঘটে, যার মধ্যে একটি হল ‘হিপোক্যাম্পাস’ আর আরেকটি হলো ‘অলফ্যাক্টরি বাল্ব’।
‘হিপোক্যাম্পাস’ হল আমাদের আবেগ, স্মৃতিশক্তি, জ্ঞানীয় ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। ‘নিউরোজেনেসিস’ হল মস্তিষ্ক প্রখর এবং আবেগ সামলে রাখার মুলমন্ত্র।
যে অভ্যাস ও খাবার নিউরোজেনেসিস’য়ের জন্য উপকারী
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা সবই ‘হিপোক্যাম্পাস’য়ের জন্য উপকারী। শরীরচর্চা, সামাজিক যোগাযোগ, পরিবেশগত উন্নয়ন ‘নিউরোজেনেসিস’য়ের গতি বাড়ায়।
ডা. রামজি’র ভাষায়, “মাছ, বাদাম, বীজে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফল, সবজি, শষ্যজাতীয় খাবারে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, বি ভিটামিন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান ‘নিউরোজেনেসিস’ প্রক্রিয়ার জন্য উপকারী।”
‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’ প্রক্রিয়ার জন্য মস্তিষ্কের একটি জৈব রাসায়নিক উপাদান প্রয়োজন, তা হলো ‘বিডিএনএফ’। এটি এক ধরনের ‘নিউরোট্রোফিন’ বা প্রোটিন যা নিউরন’য়ের বৃদ্ধি ও টিকে থাকার জন্য আবশ্যক।
নতুন নিউরন গজানোর সার বলা যেতে পারে তাকে। এই উপাদানের মাত্রা বাড়ানো জন্য দরকার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। পাশাপাশি ‘ফ্লাভানয়েড’ হল আরেকটি উপাদান যা ‘বিডিএনএফ’ মাত্রা বাড়ায়।
নিউরন’য়ের ধ্বংস রোধ করতে রান্না করতে হবে প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ মসলা দিয়ে। যেমন- হলুদ, রোজমেরি, আদা ইত্যাদি।
খাদ্যাভ্যাসে ভোজ্য আঁশও খুব জরুরি। আর জীবনযাত্রায় পরবর্তন আনার ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল- মানসিক চাপ কমানো, পর্যাপ্ত ঘুমানো, নিয়মিত শরীরচর্চা।