আশি বছর বয়সে থেমে গেল আলোচিত রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার জীবন।
রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে হাসপাতালের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়।
তার মেয়ে অন্তরা হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ বাবা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত পরশু তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও এক সময়ের তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা শেষ দিকে দল থেকে ছিটকে পড়ে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে দল গঠন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছাকাছি আসেন। কয়েক বছরের আইনি লড়াই শেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তার দল নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
রাজনীতির পাশাপাশি রাজধানীর ৩৩ তোপখানা রোডে ‘চেন্সারি চেম্বার’ নামে অফিস খুলে আইন সেবা দিতেন নাজমুল হুদা। এ চেম্বারে নাজমুল হুদার জুনিয়র ফরহাদ হোসেন জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এই রাজনীতিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাজমুল হুদার এপিএস মো. শামীম আহসান জানান, রাতে মরদেহ ধানমন্ডি বাসভবনে রাখা হবে। সোমবার ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডের মসজিদে হবে জানাজা।
সেখান থেকে নাজমুল হুদা শেষবারের জন্য ফিরবেন নিজ এলাকা দোহারে। সেখানে বাদ জোহর আরেক দফা জানাজা শেষে শাইনপুকুর গ্রামে সমাহিত করা হবে।
বিএনপি গঠনের সময়ই দলটিতে যুক্ত হন ব্রিটেন থেকে আইনে ডিগ্রি নিয়ে আসা নাজমুল হুদা। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে নিয়েছিলেন তাকে।
খালেদা জিয়ার সরকারে ১৯৯১ সালে তথ্য ও ২০০১ সালে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে মাঝে একবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পুনরায় ফিরেছিলে।
১/১১ সময়ে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা দেয় এবং তিনি গ্রেপ্তার হন।
২০১০ সালে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে আবার আলোচনায় এসেছিলেন। তখন দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা নাজমুল হুদাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত হলেও তিনি দলীয় কাজ করতে থাকলে এক বছর পর ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার সদস্যপদদ আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
পরের বছর ২০১২ সালেই আবার বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়। এবার নাজমুল হুদা পদত্যাগ করলে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে যায়; গঠন করেন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল।
পরে সেই দল থেকে তাকেই বহিষ্কার করে ২০১৪ সালে এমপি হন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে ভেড়ার চেষ্টা করেন হুদা।
তাতে সফল না হলে ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর তৃনমূল বিএনপি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। যদিও এ দলের রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি তিনি শুরু করতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন তৃনমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয়।
এজন্য অবশ্য আইনি লড়াই চালাতে হয়েছিল আইনজীবী থেকে রাজনীতিতে নাম লেখানো হুদাকে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় নিবন্ধন পায় তার দল, যা তাকে আবার সংবাদের শিরোনামে এনেছিল।