ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মূল্যায়নে শীর্ষ যোগ্যতা হিসেবে ‘সততা ও নৈতিকতা’ সংযুক্ত করে শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়ার নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার নতুন এই ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান (সংশোধন) নীতিমালা ২০২২’ মেনে চলতে নির্দেশনা দিয়ে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
আগে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মূল্যায়নে একই মানদণ্ড ছিল।
নতুন নীতিমালায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বেলায় প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই ধাপ পর্যন্ত এবং বেসরকরি ও বিদেশি ব্যাংকে পরের তিন ধাপ পর্যন্ত নতুন একটি মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে।
আর চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ ধাপ পর্যন্ত এবং সপ্তম থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা মানদণ্ডে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালা প্রণয়নের ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, “সব তফসিলি ব্যাংকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নৈতিকতা কমিটি গঠন, ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।”
শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদানে আরও পদ্ধতিগত স্বচ্ছতা আনতে এবং পরিসর বাড়াতে তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নতুন নীতিমালাটি প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে পুরস্কার দিতে ব্যাংক কর্মীদের যোগ্যতা ও মূল্যায়নের মানদণ্ড নির্ধারণ করে ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা, ২০১৮’ অনুসরণ করা হত।
ওই নীতিমালায় ২০টি বৈশিষ্ট্যকে নির্ধারণ করে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছিল, যেখানে গুণাবলীর মধ্যে শীর্ষে ছিল ‘পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা।’
নতুন নীতিমালায় মূল্যায়নের বৈশিষ্ট্য কমিয়ে ১০টিতে নামিয়ে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, শীর্ষস্থানে রাখা হয়েছে ‘সততা ও নৈতিকতার নির্দশন’।
এখনকার নীতিমালায় বলা হয়েছে, পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মীর চাকরির বয়স কমপক্ষে তিন বছর হতে হবে। একবার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলে পরের তিন বছর আর বিবেচনায় আসতে পারবেন না ওই ব্যক্তি।
নতুন নীতিমালায় কর্মচারীদের (পিয়ন/মেসেঞ্জার/দারোয়ান/গার্ডসহ ব্যাংকে চাকরিরত অন্যান্যদের) জন্য আলাদা মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের পুরস্কারের আলাদা মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মানদণ্ডেই ১০টি বৈশিষ্ট্য রাখা হয়েছে। প্রতিটি মানদণ্ড মূল্যায়নে ১০০ নম্বর রাখা হয়েছে, যার প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের জন্য থাকছে ১০ নম্বর করে।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ৮০ নম্বরের কম পেলে তিনি পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন না।
এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও তার পরবর্তী তিন ধাপের কর্মকর্তাদের মূল্যয়নে সততা ও নৈতিকতার নিদর্শন, নেতৃত্ব, প্রতিষ্ঠানের অভিলক্ষ্য বাস্তবায়ন, সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতা, ই নথি সেবা সহজীকরণ ও সংস্কার কার্যক্রমে উৎসাহিতকরণ, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়ন, শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন- এই ১০ বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিতে হবে।
পুরস্কার দিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে বাছাই কমিটি করতে নির্দেশনাও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে উৎসাহ দিতে ব্যাংকের র্কমর্কতা-কর্মচারীদের মূল্যায়ন করে বছর শেষে পুরস্কার দিতে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রবর্তন করা হয় ২০১২ সালে।
পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সম্মাননার পাশাপাশি সর্বশেষ মূল বেতনের সমপরিমাণ এক মাসের অর্থ নির্ধারণ দেওয়ার নিয়ম ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।