দুবাই বা আবু ধাবির মতো শহরগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মরুর বুকে সৌদি আরবকে পর্যটন গন্তব্য করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে দেশটির সরকার।
নগর পরিকল্পনায় আকর্ষণীয় বড় বড় সব প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি এবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর নির্মাণে হাত দিয়েছে তারা।
সিএনএন জানিয়েছে, কিং সালমান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নামে এই বিমানবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে রাজধানী রিয়াদে। সেখানে ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে চলাচল করতে পারবে সাড়ে ১৮ কোটি বিমানযাত্রী। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বর্তমান কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সম্প্রসারিত করে ৫৬ বর্গ কিলোমিটার (২২ বর্গ মাইল) এলাকাজুড়ে এটি নির্মাণের কথা ভাবছে সরকার।
ব্রিটিশ স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ‘ফস্টার প্লাস পার্টনারস’ এই বিমানবন্দরের নকশা করেছে। এ প্রকল্পকে তারা বলছে, বিমানবন্দর নির্ভর নগরী। যদিও দেশটি ইতোমধ্যে ‘অ্যারোট্রোপলিস’ বা বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নগরী কাঠামোতেই রয়েছে।
সৌদি আরবে বিশ্বের অন্যতম বড় কিং ফাহাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট রয়েছে রাজধানী রিয়াদ থেকে ২৫০ মাইল উত্তরপূর্বে দাম্মামে।
‘ফস্টার প্লাস পার্টনারস’র হেড অব স্টুডিও লুক ফক্স সিএনএনকে জানান, বিমানবন্দরটি প্রথাগত টার্মিনালকে একটি ‘কনকোর্স লুপ’ দেবে; অর্থাৎ বৃত্তাকার টার্মিনালের ভেতরে থাকবে বিশাল খোলা জায়গা, আর যাত্রীদের আসা-যাওয়ার জন্য থাকবে একাধিক প্রবেশপথ।
বিমাবন্দরে ১১ বর্গ কিলোমিটার (৪.৫ বর্গ মাইল) এলাকাজুড়ে থাকবে বিভিন্ন ধরনের দোকান বা আউটলেট। আবাসন ও বিনোদনসহ নানা সুবিধা থাকবে সেখানে।
২০৩০ সাল নাগাদ বিমাবন্দরটিতে বছরে ১২ কোটি যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবে। পরবর্তী দুই দশকে যাত্রী চলাচল আরও ৫০ শতাংশ বাড়ানো হবে। এছাড়া বছরে সাড়ে ৩৫ লাখ টন মালামাল পরিবহনের লক্ষ্য রয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর করে এই বিমানবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফস্টার প্লাসের সিনিয়র পার্টনার সেফ এ বাহা এলদিন এক বিবৃতিতে জানান, বিমানবন্দরের উদ্দেশ্য হল রিয়াদকে ‘সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের বৈশ্বিক কেন্দ্র’ হয়ে উঠতে সহায়তা করা।
এর আগে মরুভূমির বুকে সরলরেখা বরাবর আশ্চর্য এক ভবন তৈরির পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল সৌদি আরব, যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে ১০৬ মাইল দীর্ঘ ‘ওয়ান-বিল্ডিং সিটি’; সেই শহরে বাস করবে ৯০ লাখ মানুষ। মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অদ্ভুত এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
সিএনএন জানিয়েছিল, কল্পনার ওই ভবনের নকশাও প্রকাশ করা হয়েছে। দুই পাশে কাচের দেয়ালে ঘেরা এ অবকাঠামো যেন কল্পবিজ্ঞান থেকে উঠে আসা কোনো দালান। শহরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য লাইন’। মরুর বুক চিরে সরল রেখার মতো এই ভবন সোজা চলে যাবে মাইলের পর মাইল।
প্রস্তাবিত ভবনটি হবে ২০০ মিটার চওড়া (৬৫৬ ফুট)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ মিটার বা ১ হাজার ৬৪০ ফুট উপরে থাকবে খাড়া এই শহর। ভবনটির মোট আয়তন হবে ৩৪ বর্গ কিলোমিটার।
সৌদি সরকারের নিওম প্রকল্পের অংশ হিসেবে জাঁকালো এই স্থাপত্য নির্মাণে লাগবে বহু বছর। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘোষণা অনুযায়ী, উপসাগরীয় দেশটির উত্তর-পশ্চিমে লোহিত সাগরের কাছে অত্যাধুনিক এ শহর গড়ে উঠবে।