Loading...
The Financial Express

বিশ্বের নামকরা কিছু প্রতিষ্ঠানের উত্থানের গল্প

| Updated: December 27, 2022 21:30:35


বিশ্বের নামকরা কিছু প্রতিষ্ঠানের উত্থানের গল্প

কথায় আছে সাফল্য লাভের কোনো শর্টকাট নেই। যেকোনো ধরনের কাজে সফলতা লাভের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় ব্যতীত বিকল্প কোনো রাস্তা পাওয়া মুশকিল। রাতারাতি নাম, যশ অথবা খ্যাতি পেয়ে যাওয়ার স্বপ্ন যদি কেউ দেখে থাকে তবে সেটা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বর্তমান সময়ে যে নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগান শোনা যায় তাদের প্রতিষ্ঠাতারাও কিন্তু একদিনে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেননি। প্রতিষ্ঠানের পিছনে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়েই আজকের অবস্থানে নিজস্ব কোম্পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আজ জানবো তেমনি কিছু প্রতিষ্ঠানের পথচলার কাহিনী সম্পর্কে।

ম্যাকডোনাল্ডস

গল্পের শুরু ৮২ বছর আগে, ১৯৪০ সালে। রিচার্ড ও মরীচ ম্যাকডোনাল্ড নামের দুই ভাই ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান বারনারদিনো’তে ম্যাকডোনাল্ডস রেস্টুরেন্ট চালু করেন। দীর্ঘদিন বারবিকিউ রেস্টুরেন্ট চালানোর  পর তারা অন্য ফাস্টফুড বানানোর দিকে মনোনিবেশ করেন।

মেন্যুতে নিয়ে আসেন হ্যামবার্গার, আলুর চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পেস্ট্রি ও পানীয়। কারণ তারা ভাবেন এতে করে আরো বেশি লাভ হবে। সেই কাজের সুবিধার্থে ক্রয় করে নিয়ে আসেন মাল্টি মিক্সার।

এইখান থেকেই গল্পে চলে আসেন মূল চরিত্র। তিনি হচ্ছেন রে ক্রক। এই রে ক্রুক ই ম্যাকডোনাল্ডস কে একটা ছোট্ট দোকান থেকে বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়ার মূল হোতা।

রিচার্ড ও মরীচ যে মাল্টি মিক্সার অর্ডার করেছিলেন, সেটি সরবরাহ করতেন রে ক্রুক। সেই থেকেই ম্যাকডোনাল্ড ভাতৃদ্বয়ের ফাস্টফুড ব্যবসার সাথে পরিচিত হন তিনি। আর প্রথম দেখাতেই ফাস্টফুডের জনপ্রিয়তায় মুগ্ধ হয়ে  অন্যত্র রেস্টুরেন্টের শাখা খোলার ছক কষে ফেলেন।

যেই ভাবা সেই কাজ, ১৯৫৫ সালে তিনি রিচার্ড ও মরীচের কাছ থেকে অন্যান্য জায়গায় শাখা খোলার স্বত্ত্ব কিনে নেন এবং প্রথম শাখা খোলেন ইল্লিনয়েসের 'ডেস প্লেইনসে'।

এরপর থেকে আর ফিরে তাকাননি তিনি। ম্যাক ভ্রাতাদের সাথে যা বিক্রি হবে তার ০.৫% দিয়ে দেওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে যান। পাঁচ বছর যেতে না যেতেই ম্যাকডোনাল্ডসের ২২৮ টি শাখা খুলে ফেলেন। শিশুদের আকৃষ্ট করতে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করেন।

১৯৬০ সালের দিকে কোম্পানিটির বাৎসরিক নীট লাভের পরিমাণ ছিলো ৫৬ মিলিয়ন ডলার। তবে তাতেও সন্তুষ্ট ছিলেননা এই ভদ্রলোক। কারণ তখনও ম্যাকডোনাল্ডস এর মূল স্বত্তাধিকারী ছিলেন ম্যাক ভ্রাতৃদ্বয়। 

তাই তিনি ঠিক করলেন পুরো মালিকানাটাই কিনে নিবেন। 'ম্যাকডোনাল্ডস' নামসহ পুরো দোকানের স্বত্ত্ব ২.৭ বিলিয়ন ডলারে ম্যাক ভ্রাতাদের কাছ থেকে কিনে নেন। সেজন্য অবশ্য তাকে অনেক ধার দেনা করতে হয়েছিলো।

তবে যাইহোক না কেনো, ম্যাকডোনাল্ডস এর পিছনে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্তটি রে ক্রুক এর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত ছিলো। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে এর শাখা রয়েছে। ২০২১ সালে ম্যাকডোনাল্ডস এর মোট আয় ছিলো ৭.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গুগল

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র ল্যারি পেজ ও সার্গেই ব্রনি। ১৯৯৬ সালে নিজেদের রিসার্চ প্রজেক্টের আওতায় একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন।

সেটির নাম দেন 'ব্যাকরাব'। কারণ সিস্টেমটি সব ব্যাক লিংক চেক করে ফলাফল প্রদর্শন করতো। তবে শেষ পর্যন্ত এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'গুগল'।

১৯৯৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে গুগলের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়ান সান মাইক্রো সিস্টেমের সহ প্রতিষ্ঠাতা এন্ডি বেচেলশিম। তিনি গুগল কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই  দুই বন্ধুকে এক লক্ষ ডলার দিয়ে সাহায্য করেন।

এরপর থেকে গুগল নামক প্রতিষ্ঠানটিকে আর কখনও থেমে থাকতে হয়নি। পরের বছর জুন মাসে দুটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নামক কোম্পানী গুগলে আড়াই কোটি ডলার বিনিয়োগ করে। ২০০৪ সালে মাত্র ৮৫ ডলারে গুগল শেয়ার বাজারে তাদের শেয়ার ছেড়ে অল্পদিনেই তারা দুই হাজার তিন'শ কোটি ডলার আয় করে।

১৯৯৯ সালে সান্তা মার্গারেট এ্যাভিনিউ-মেনলো পার্ক ক্যালিফোর্নিয়ার ওজচিক্কি গ্যারেজ থেকে গুগল তাদের অফিস পরিবর্তন করে ১৬৫ ইউনিভার্সিটি এ্যাভিনিউ-আল্টো ডে তে স্থানান্তর করে নিয়ে আসেন।

সে সময় গুগলের সর্বমোট কর্মী সংখ্যা ছিল মাত্র ০৮ জন। ২০২১ সাল অনুযায়ী গুগলে কর্মরত রয়েছেন ১লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৯৫ জন কর্মী

বর্তমানে ইন্টারনেটে কোনো কিছু সার্চ করতে গেলে শুরুতেই যেই নামটি সবার মাথায় আসে সেটি হচ্ছে গুগল। গুগলের নাম জানেননা এমন মানুষের সন্ধান পাওয়া কিছুটা দুষ্কর।

অ্যামাজন

একটি ভাড়া বাসার গ্যারেজে ৩টি কম্পিউটার ও ৩জন সহযোগীর মাধ্যমে ১৯৯৪ সালে একটি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। সেই প্রতিষ্ঠানটির নাম অ্যামাজন এবং এর উদ্যোক্তা হচ্ছেন জেফ বেজোস।

খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা জেফ বেজোস সবসময় ই জীবনে ভিন্ন কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্নের জন্য তিনি চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন। এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে পাড়ি জমিয়েছিলেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে।

ভাগ্যদেবতা বেজোস উপরে বেশ সুপ্রসন্ন-ই ছিলেন বলা যায়। কারণ শুরুটা তিনি করেছিলেন স্রেফ একটা অনলাইনভিত্তিক বইয়ের দোকান হিসেবে, যারা ক্রয়কৃত বইটি আপনার দোরগড়ায় গিয়ে পৌছে দিয়ে আসবে । কিন্তু বর্তমানে অ্যামাজন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে সেরা  ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

অ্যামাজন এখন আর ছোট্ট একটা গ্যারেজের মধ্যে আবদ্ধ নেই। ১৬ হাজারেরও বেশি পণ্য নিয়ে তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। বর্তমানে অ্যামাজনের গড় মাসিক আয় ১৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সাফল্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ম্যাকডোনাল্ডস, গুগল ও অ্যামাজন এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেনো মাইলফলক স্বরূপ দন্ডায়মান।

ফারজানা জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic