Loading...
The Financial Express

বিশ্বকাপের বল ‘আল রিহলা’

| Updated: November 24, 2022 19:00:21


কাতার বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক বল ‘আল রিহলা’। ছবিঃ ফিফার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে কাতার বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক বল ‘আল রিহলা’। ছবিঃ ফিফার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে

নাম শুনে সবার ধারণা হয়ে যাওয়ার কথা যে ‘আল রিহলা’ আরবি শব্দ। আরবি শব্দ হবেই বা না কেনো? এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ যে আরব বিশ্বের দেশ কাতার। তবে ‘আল রিহলা’ শব্দটির বিশেষত্ব ভিন্নভাবেও রয়েছে। ইবনে বতুতার বিখ্যাত বই ‘আল রিহলা’ বা ‘দ্যা জার্নি’ সম্পর্কে অনেকেরই হয়তো জানা আছে। এবার মেসি, রোনালদো, নেইমারদের বশ মানাতে হবে এই ‘আল রিহলা’-কেই। 

এবারও বিশ্বকাপের বল তৈরির দায়িত্বে ছিলো বিশ্বখ্যাত ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারক জার্মান প্রতিষ্ঠান আডিডাস। ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে এ নিয়ে ১৪তম বারের মতো বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক বল তৈরির দায়িত্ব পালন করলো তারা। ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফিফা বিশ্বকাপের ২২তম আসরে ব্যবহার হওয়া এ বল সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে। যে বিশ্বকাপে সর্বপ্রথম এয়ার কন্ডিশনড স্টেডিয়াম, আধা-স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে সেখানে বিশ্বকাপের বলে প্রযুক্তির কোনো চমক থাকবে না তা তো হতে পারে না!

বিশ্বকাপ বলে ব্যবহৃত হওয়া নানাবিধ প্রযুক্তি ছাপিয়ে প্রথমে যে বিষয়টি প্রাধান্য পায় তা হচ্ছে বল তৈরির পিছনের ভাবনা। আডিডাসের ডিজাইন বিভাগের প্রধান ফ্রাঞ্জিস্কা লোফেলম্যান জানিয়েছেন, ‘আল রিহলা’ নামক এ বলের মধ্যে কাতারের সংস্কৃতি, স্থাপত্য, প্রাচীন নৌকা এবং জাতীয় পতাকার রঙয়ের মতো বিষয়গুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। 

তিনি আরও জানিয়েছেন, এবারের বলটিই বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাতাসে সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বল হবে। এছাড়া এই বল মাঠের বিভিন্ন তথ্য নির্ভুলভাবে পাঠাতে সক্ষম হবে। ম্যাচের গতি বাড়ানোর জন্যই নাকি এভাবে বলটি তৈরি করা হয়েছে। 

ইওরস্টোরির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বলটি ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারিদের কাছে নির্ভুলভাবে রিয়েল-টাইম ডেটা পাঠাতে পারবে। এছাড়াও এর থ্রিডি অ্যানিমেশন ফুটবলের সংস্পর্শে প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত খেলোয়াড়দের সঠিক অবস্থানের জানান দেবে। এমনকি প্রয়োজনে তা টেলিভিশন এবং স্টেডিয়ামের বড় মনিটরেও দেখানো হবে, যার উদাহরণ ইতোমধ্যেই কাতার এবং ইকুয়েডরের মাঝে অনুষ্ঠিত হওয়া উদ্বোধনী ম্যাচে দেখা গেছে।  

‘আল রিহলা’ ফিফার আধা-স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তির কার্যকারিতায় সাহায্য করবে। এই বলের মধ্যে রয়েছে মোশন সেন্সর যার মাধ্যমে বলটি অফসাইড রেখা অতিক্রম করেছে কিনা তা যাচাই করা যাবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হবে কম্পিউটারের মাধ্যমে। প্রাপ্ত তথ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফলাফলগুলো সরাসরি সম্প্রচারিত হবে, যা তাৎক্ষণিকভাবেই গ্যালারি সহ পুরো বিশ্ববাসী দেখতে পারবে।

বারোটি বড় এবং আটটি ছোট প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে এ বলটিতে। ৩৫০ জন পেশাদার এবং অপেশাদার ফুটবলার দ্বারা বলটিকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়াও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং বায়ার্ন মিউনিখের অনুশীলনেও ব্যবহার করা হয়েছিলো ‘আল রিহলা’।

২০১৮ বিশ্বকাপের বল টেলস্টারের থেকেও পরিবেশবান্ধবভাবে তৈরি করা হয়েছে আল রিহলাকে। আডিডাসের পণ্য উন্নয়ন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অলিভার হান্ডাকের এমন দাবি করে বলেছেন, ‘‘২০১০ বিশ্বকাপের বল জাবুলানির পর বিশ্বকাপের বল নিয়ে আর তেমন সমালোচনা হয়নি। আমরা আশা করছি এবারও সকলকে খুশি করবে ‘আল রিহলা’।

আল রিহলা’-র ফটোশ্যুটে লিওনেল মেসি। ছবিঃ টুইটার

পানিভিত্তিক আঁঠা ও কালির মতো পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবারের বল। বিশ্বকাপ ও আডিডাসের লোগো ছাড়াও বলে থাকছে নীল, হলুদ, কমলা ও লাল রঙয়ের ডিজাইন। ফিফার ভাষ্যমতে, আল রিহলার এই জ্বলজ্বলে রং আসলে বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ এবং দিন দিন বাড়তে থাকা খেলার গতিকে বোঝাতেই করা হয়েছে। বিশ্বকাপের বল বিক্রি থেকে যে আয় হবে তার এক শতাংশ খরচ করা হবে সমাজ কল্যাণে।

ইকার ক্যাসিয়াস, কাকা, ফারাহ জেফরি নউফ আল আনজির মতো কিংবদন্তিরা প্রথম বলটিকে জনসমক্ষে নিয়ে আসবেন। বল উন্মোচন করার পর আডিডাস তাদের সবচেয়ে বড় আইকন লিওনেল মেসিকে দিয়ে এর ফটোশ্যুট করিয়েছে। এছাড়াআল রিহলা’ হাতে ফটোশ্যুটে অংশ নিয়েছেন টটেনহ্যাম হটস্পারের কোরিয়ান ফরোয়ার্ড হিউং-মিন সন ও। 


মোঃ ওমর ফারুক তপু বর্তমানে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic