ফুটবল বিশ্বকাপের আগে টিভির বাজারে বিক্রি বেড়েছে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টেলিভিশনে চলছে মূল্যছাড় আর উপহারের ছড়াছড়ি; তবে আগের বিশ্বকাপের রমরমার তুলনায় এবার আশা পূরছে না বিক্রেতাদের।
কারণ হিসেবে কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে জেঁকে বসা মন্দার শঙ্কাকে দায়ী করছেন তারা।
ইলেকট্রনিকস পণ্যের চেইন শপ ’বেস্ট ইলেকট্রনিকস’- এর মতিঝিল শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বললেন, “মানুষের হাতে টাকা কম, এবার বিশ্বকাপের আগে টেলিভিশন বিক্রি তাই তুলনামূলক কম।”
এই ‘তুলনামূলক কম’টা কতটা কম? ওয়ালটনের টিভি প্রডাক্ট ম্যানেজার তানভীর মাহমুদ শুভ বললেন, তাদের হিসাবে ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ মৌসুমের চেয়ে এবার বিক্রি কমেছে ২০ শতাংশের মত।
“বিক্রি ড্রপ ডাউন করেছে, তা সত্য। তবে যেটুকু বিক্রি হচ্ছে তাও আমরা আশা করিনি।”
বিভিন্ন অফারে ক্রেতা টানার চেষটা কোম্পানিগুলোর। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
রাজধানীর স্টেডিয়াম মার্কেট, মগবাজার, মিরপুর ও গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিঙ্গার, এলজি, ওয়ালটন, ট্রান্সটেক, মিনিস্টার, প্যানাসনিক, কনকা ও হাইকো, স্যামসং, হায়ার, যমুনা, ভিসতার মত দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের টেলিভিশনে বিশ্বকাপ সামনে রেখে ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় চলছে।
বিক্রেতারা বললেন, বছরে ঈদের মৌসুমে তাদের বিক্রি কিছুটা বাড়ে। তবে বড় ক্রীড়া আসরগুলোর টিভি বিক্রির সবচেয়ে ভালো সময়। সে কারণে বিশ্বকাপ সামনে রেখে তারা বরাবরই ভালো বিক্রির আশা করেন, এবছরও ব্যতিক্রম নয়।
এবার বাজার কেমন জানতে চাইলে ওয়ালটন মিরপুর-১ আউটলেটের ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম বললেন, “বিশ্বকাপ এলে তো টিভি কেনার উন্মাদনা বাড়ে। বেশ কিছু ছাড়ের ব্যবস্থাও থাকে। আমাদের আউটলেটে দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি টিভি বিক্রি হচ্ছে। তবে এটা আগের মৌসুমের তুলনায় কম।”
প্রত্যাশা আর বাস্তবতার পার্থক্য কোথায়, তার আরও একটু ব্যাখ্যা পাওয়া গেল সনির বসুন্ধরা আউটলেটের ম্যানেজার মেহেদী হাসানের কথায়। তিনি বললেন, বিশ্বকাপে সাধারণত টেলিভিশন কেনার যে ‘হিড়িক’ লেগে যায়, এবার সেটা হয়নি।
শান ইলেকট্রনিকসের কর্মী আল আমিন অবশ্য বললেন, এবার তাদের বিক্রি ‘অনেক কম’।
“মানুষের জীবনযাপনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ সময়ে যা বিক্রি হত, তাই হচ্ছে না। বিশ্বকাপে টিভি কিনবে এটা এবার বিলাসিতা হয়ে গেছে।”
মিরপুর-১০ নম্বরে একটি টেলিভিশন সারাইয়ের দোকানে কথা হল বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী হাসান হৃদয়ের সঙ্গে। তিনিও আশা পূরণ না হওয়ার কথা বললেন।
“বিশ্বকাপ আসছে, খেলা তো দেখতে হবে। ভেবেছিলাম নতুন টেলিভিশন কিনব। পকেটের হাল তো খারাপ, পুরনোটাই ঠিক করাতে এলাম।”
আগ্রহ বড় পর্দার টেলিভিশনে
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিক্রি কম হলেও যারা কিনতে আসছেন, তাদের বেশিরভাগের আগ্রহ স্মার্ট আর বড় ডিসপ্লের টেলিভিশনে।
মিরপুরের রোকেয়া স্মরণীর সনি র্যাংস আউটলেটে টেলিভিশন দেখতে আসা হাসনাত-শেলী দম্পতি বললেন, বড় ডিসপ্লের টেলিভিশন কেনার ইচ্ছা তাদের অনেক দিনের; বিশ্বকাপের মৌসুমে বাড়তি ছাড় দিচ্ছে, তাই কিনতে এসেছেন।
আইকন ইলেকট্রনিকসের কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তা মো. রাকিব বললেন, “এ বছর বিদেশি ব্র্যান্ডের স্মার্ট আর বড় ডিসপ্লের টেলিভিশনের বিক্রি তেমন কমেনি, মন্দার প্রভাব অতটা পড়েনি। বেশ কিছু ছাড়ও আছে, যারা নেওয়ার, তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে।”
একই ধরনের তথ্য দিলেন ওয়ালটনের টিভি প্রোডাক্ট ম্যানেজার তানভীর। তিনি বললেন, “২১, ২৯, ৩২ ইঞ্চি টেলিভিশনের বিক্রি কমে গেছে। তবে ইন্টারেস্টিংলি স্মার্ট আর বড় ডিসপ্লের টেলিভিশনের চাহিদা আছে বেশ।”
ব্র্যান্ডভেদে ১৯ ইঞ্চি থেকে ৩২ ইঞ্চি পর্যন্ত বেসিক টেলিভিশন ৭ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৩২ ইঞ্চি থেকে শুরু হওয়া স্মার্ট টেলিভিশনগুলোর দাম ১৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ফিচার ও ডিসপ্লের আকার ভেদে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।