‘মাশরাফি ভাইয়ের খেলা দেখার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। প্রথম বল দেখার অনেক ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ২টা ১৫ মিনিটে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি ভাই ২ ওভার করে ফেলেছেন। আমি তো জানতাম আড়াইটায় খেলা শুরু। খুব খারাপ লেগেছে তখন। এরপর তড়িঘড়ি করে মাঠে এসেছি। ভাগ্য ভালো যে আমার বাসা কাছেই’- কথাগুলো বলছিলেন মিরপুর এক নম্বর থেকে খেলা দেখতে আসা মোহাম্মদ রিমন হোসেন। বিপিএলের ম্যাচ শুরুর সময় এগিয়ে আনার খবর না জানায় প্রিয় তারকার প্রথম দুই ওভার দেখতে পারেননি সিলেট স্ট্রাইকার্সের এই সমর্থক।
শুক্রবার বিপিএলের উদ্বোধনী দিনে রিমনের মতো আরও অগণিত দর্শককে পড়তে হয়েছে এই সমস্যায়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে শুক্রবারের ম্যাচগুলো শুরুর সময় ছিল দুপুর আড়াইটায়। কিন্তু ম্যাচের দিন বেলা সাড়ে ১২টায় বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সিলেট ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের খেলা শুরু হবে দুপুর ২টা থেকে।
শেষ মুহূর্তে ম্যাচের সময় এগিয়ে আনার প্রভাব পড়েছে দর্শকদের খেলা দেখার পরিকল্পনায়ও। অনেকেই খেলা দেখতে পারেননি শুরু থেকে। ছুটির দিনে শুরু হওয়ায় বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে দর্শক উপস্থিতি বেশ ভালো। ইস্টার্ন গ্যালারি, নর্দার্ন ও সাউদার্ন স্ট্যান্ড অনেকটা ভরে যায় ম্যাচের প্রথম ইনিংসের মধ্যে।
টিকেট পাওয়া নিয়েও খুব একটা ভোগান্তি দেখা যায়নি। যথাযথ মূল্যে কাউন্টার থেকেই টিকেট সংগ্রহ করতে পেরেছেন অনেকেই। তবে খেলা এগিয়ে আনার খবর আগে না জানানোর কারণে যথাসময়ে মাঠে আসা হয়নি অনেক দর্শকের।
সাভার থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেলা দেখতে এসেছেন আপন মির্জা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপে তিনি বললেন, সময় আগানোর খবর জানতেন না বলে শুরুর আধা ঘণ্টা দেখতে পারেননি তারা।
“ছোট ভাইকে দিয়ে প্রথম দিনই (বুধবার) টিকেট করিয়ে রেখেছিলাম। আমি জানতাম খেলা শুরু আড়াইটায়। সেই অনুযায়ী সাভার থেকে রওনা হয়েছি। কিন্তু এখানে (মিরপুর) এসে শুনি খেলা নাকি শুরু হয়ে গেছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। শুরু থেকে দেখতে না পারায় কিছুটা মন খারাপ হয়েছে। সময় আগানোর খবর আগে জানলে হয়তো সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে পারতাম।”
পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে আড়াইটার কথা বলা হলেও টিকেটের গায়ে ঠিকই দুপুর ২টায় খেলা শুরুর সময় ছাপানো হয়েছে। টিকেট ছাড়াও ম্যাচ অফিসিয়াল কিংবা স্কোরারদেরও আগেই জানানো হয় সময় আগানোর কথা। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এটি প্রচারণার কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিসিবি। তাই জানতে পারেননি দেশজুড়ে ক্রিকেট অনুসারীরাও।
খেলা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে সময় বদলানোর খবর জানানো হলেও ততক্ষণে অনেক দেরিই হয়ে যায়। সময় আগানো নিয়ে প্রশ্ন দর্শকদের মনেও। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়েই যেমন সময় আগানোর কারণ জানতে চান নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে বন্ধুকে নিয়ে খেলা দেখতে আসা শাহাজাদা মোহাম্মদ ইউসুফ।
“আমরা জানতাম খেলা হবে আড়াইটায়। ওই সময় ধরে বাসা থেকে বের হই। দেড়টার দিকে ইনডোর স্টেডিয়ামের কাউন্টারে পৌঁছে শুনি খেলা শুরু ২টায়। টিকেট নিয়ে আসতে আসতে খেলা শুরু হয়ে যায়। প্রথম ওভার দেখতে পারিনি। তবে এখন মাশরাফি ভাই, (মোহাম্মদ) আমির ভাইদের সামনে থেকে দেখছি। ভালো লাগছে।”
একই ঘটনা রংপুর রাইডার্সের ভক্ত আলমগীর হোসেনের ক্ষেত্রেও। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে খেলবে রংপুর। মেঘনা ঘাট এলাকা থেকে প্রথম ম্যাচেই মাঠে চলে আসেন আলমগীর। সময় আগানোর কারণে প্রিয় দলের খেলা দেখায় কোনো সমস্যা হবে না তার। কিন্তু হুট করে এই সিদ্ধান্তে অনেকের মতো অবাক তিনিও।
“দুপুর দুইটার দিকে এখানে (মিরপুর স্টেডিয়ামে এক নং গেটসংলগ্ন বুথ) এসে টিকেট করে মাঠে ঢুকেছি। টিকেট পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। কাউন্টার থেকে সহজেই পেয়েছি। কিন্তু আমি জানতাম আড়াইটায় খেলা শুরু হবে। মাঠে ঢুকে বুঝতে পারলাম খেলা ২টায় শুরু হয়ে গেছে। আমি মনে করি, এটি আগে জানানো উচিত ছিল।”
শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডে বন্ধুকে নিয়ে খেলা দেখছিলেন সিলেটের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ওয়ালিদ। হাতে সিলেট স্ট্রাইকার্সের পতাকা থাকায় দূর থেকেই আলাদা করা যাচ্ছিল তাদের। কাছে গিয়ে কথা বলতেই জানা গেল, সময় আগানোর খবর না জানায় প্রিয় দলের খেলা শুরু থেকে দেখতে পারেননি তারা।
“আমাদের বাড়ি সিলেটে। এবার (মাশরাফি বিন) মুর্তজা ভাইও সিলেট স্ট্রাইকার্স দলে আছেন। কিন্তু শুরু থেকে খেলা দেখতে পারলাম না। ভেবেছিলাম ১০ মিনিট আগেই মাঠে ঢুকে যাব। কিন্তু ২টা ২০ মিনিটে এসে দেখি কয়েক ওভার হয়ে গেছে। (সময় আগানোর) খবরটা জানলে হয়তো আরও আগেই আসতাম মাঠে।”
পূর্ব গ্যালারির সীমানা দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ জিহাদের চোখ জোড়া খুঁজে বেড়াচ্ছিল জাকির হাসানকে। কাছে গিয়ে কথা বলতেই এই কিশোর জানালেন, ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর থেকেই জাকিরকে ভালো লাগে তার। পরে খেলার সময় আগানোর প্রসঙ্গ আনতে তার কণ্ঠেও ফুটে উঠল অসহায়ত্ব।
“আজকে তো ছুটির দিন। সায়েদাবাদ থেকে আসতে বেশিক্ষণ লাগেনি। এসে টিকেট কিনে দেখি টিকেটে লেখা ২টা বাজে খেলা শুরু। আমি জানতাম আড়াইটায় শুরু হবে। তবে মাঠে এসে সিলেটকে ফিল্ডিংয়ে দেখে ভালো লেগেছে। আমি জাকির ভাইয়ের ব্যাটিং মিস করতে চাইনি।”
খেলার সময় এগিয়ে আনার খবর জানতেন না খুলনা টাইগার্সের সমর্থক মনিরুজ্জামান বেল্টুও। তবে টিকেটের গায়ে খচিত সময় দেখে আগেভাগে মাঠে আসতে পেরেছেন এই বেসরকারি চাকুরীজীবী।
“আজকে খুলনার খেলা নেই। তবু ছুটির দিন হওয়ায় এসেছি খেলা দেখতে। শুরুতে আমিও জানতাম খেলা শুরু হবে আড়াইটায়। কিন্তু টিকেট হাতে পেয়ে দেখি ২টায় লেখা। তাই ঝুঁকি না নিয়ে আগেই চলে এসেছি। ভালো লাগছে টস থেকে শুরু করে সব কিছুই মাঠে বসে দেখতে পেরেছি।”
মনিরুজ্জামানের মতো যারা আগেভাগে টিকেট করে সময়ের ঘরে চোখ দিয়েছেন তারাই কেবল জানতে পেরেছেন সময় আগানোর বিষয়ে। বাকিদের পড়তে হয় সমস্যায়।
পরে অবশ্য বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘মিসকমিউনিকেশন’ থেকে খেলা আগানোর খবরটি জানানো হয়নি তাদের।