জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে বিদ্যুতের পাশাপাশি পানি নিয়েও চরম সংকটের কথা জানাচ্ছেন ঢাকার বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার কিছু সময় পর এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎহীনতার মধ্যে বাসাবাড়িতে পানির সরবরাহ না থাকার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
খাবার পানি থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, গোসল আর নিত্যকার কাজে সংকটের মধ্যে পড়েছেন তারা। লিফট বন্ধ থাকায় উঁচু ভবনে উঠানামায়ও কষ্টের মুখোমুখি হয়েছে মানুষ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
লালমাটিয়া এলাকায় ন্যাশনাল হাউজিংয়ের একটি ভবনের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ফারাহ তানজীম তিতিলদের। ছুটিতে ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক।
তিতিলদের ১৪ তলার অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ১৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর থেকে নানামুখী দুর্ভোগে পড়ার কথা জানান তিনি।
তিতিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২টার দিকে বিদ্যুৎ গেছে। জেনারেটর দিয়ে সার্ভিস দিচ্ছিল। কিন্তু ৪টার পর থেকে সেটাও বন্ধ।
“বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা জেনারেটরে অভ্যস্ত। ফলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আমাদের ছিল না।”
তিতিলদের ভবনে ইতোমধ্যে লিফট বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পানি থাকলেও বিদ্যুৎহীন দশা দীর্ঘায়িত হলে বাড়তি দুর্ভোগের চিন্তায় সময় কাটছে তাদের।
তিনি বলেন, “পাশের ভবনে আমার মা থাকেন। ওই ভবনে খাবার পানি নেই। তখনই বুঝলাম, বিদ্যুতের সাথে জড়িত অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
“এই সময়ে কষ্ট যা হওয়ার হচ্ছে, বিদ্যুৎহীন অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে হয়তো আরও দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হবে।”
পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা মেসবাহ উদ্দিন বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুরান ঢাকা এমনিতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বেলা ২টার পর থেকে বিদ্যুৎ নাই। পানি সরবরাহও কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে গেছে। মসজিদ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে অযু করে নামাজে যেতে।
লালবাগ ছাড়াও চকবাজার, আজিমপুর ও বখশীবাজার এলাকা থেকে আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের কাছ থেকে একই ধরনের দুর্ভোগের পড়ার কথা জেনেছেন বলে উল্লেখ করেন বাবুল।
পানি-বিদ্যুতের সংকটের মধ্যে নিজের পাশাপাশি শিশুদের নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠার কথা জানান মিরপুর-১ এ সি-ব্লকের গৃহবধূ হীরা আক্তার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যে সময়টাতে বিদ্যুৎ গেছে, সেটা সাধারণত আমাদের সবার গোসলের সময়। আবার সে সময় বাচ্চারাও স্কুল থেকে ফেরে।
“বিদ্যুৎ যাওয়ার আধাঘণ্টা পরেই আমাদের বাসার পানি চলে গেছে। আমাদের একজন বাথরুমে গিয়ে গোসল শেষ করতে পারেনি। বাচ্চারা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কান্নাকাটি করছে। তাদেরকে কোনোভাবে শান্ত রাখা যাচ্ছে না। কী বলব ভাই, দুর্ভোগের তো শেষ নাই!”
ফার্মগেটের এক প্রাইভেট হোস্টেলে থাকেন শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। আচমকা এত দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ আসছে না দেখে অবাক হন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নুসরাত বলেন, “আজ দুপুরে খেতে বসছি, হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম যে চলে আসবে, কিন্তু এখনও আসছে না।
“আমার রুম আগুন হয়ে আছে গরমে। হোস্টেলে খাবার পানি নাই। আর তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো, আমার বাসায় ইন্টারনেট কানেকশন নাই। মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িতে আম্মুর সাথে কথা বলতে পারছি না।”