বিএনপির রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের একদিন আগে থেকে বিভিন্ন জেলার নেত-কর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেছেন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীর ভিড়ও বাড়তে থাকে নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
রংপুরে হবে বিএনপির চতুর্থ বিভাগীয় গণসমাবেশ। শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে শনিবার দুপুর থেকে শুরু হবে সমাবেশের মূল কার্যক্রম।
সমাবেশের আগে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে বাস না চললেও বিভিন্নভাবে দলের কর্মী-সমর্থক-নেতারা রংপুর শহরে আসতে থাকেন। প্রাথমিকভাবে নগরীর বিভিন্ন স্থানে তারা অবস্থান করেন। সন্ধ্যার দিকে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়।
ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা রংপুর পৌঁছে গেছেন।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি মঞ্চ থেকে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় নেতা-কর্মীরা বিপুলভাবে তাকে স্বাগত জানান।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে রংপুরে বন্ধ আছে বাস চলাচল। বৃহস্পতিবার সবধরনের পরিবহনের ধর্মঘট ডাকা হয়।
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘটের কথা বলা হলেও কার্যত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে অনেক রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে মাঠে মঞ্চের কাজ। নানা ধরনের বাধা উপেক্ষা করে যেসব নেতা-কর্মীরা যাচ্ছেন তারা অবস্থান নিচ্ছেন সমাবেশস্থলের মাঠেই।
সন্ধ্যার আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা মাঠে অবস্থান নিতে শুরু করেন।
সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে নগর পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে বলে জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যত রাত বাড়ছে, নেতা-কর্মীর ভিড় তত বাড়ছে। মাঠে নেতা-কর্মীরা ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘ভয় করি না বুলেট-বোমা, আমরা সবাই জিয়ার সেনা’ – এমন নানা ধরনের স্লোগান দেন।
পুরো সমাবেশস্থল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে রাখেন।
রাতে রংপুরের পাশের জেলা-উপজেলা থেকে মোটরসাইকেলে বিচ্ছিন্নভাবে আসেন কর্মী-সমর্থকরা। এসব মোটরসাইকেল সমাবেশস্থলের অদূরে রেখে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন তারা।
মাঠের এক পাশে দেখা যায়, সমাবেশে যাওয়া কিছু নেতা-কর্মী মাঠে তাঁবু তৈরি করে শুয়ে পড়েছেন।
নগরীর জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, রবার্টসনগঞ্জ স্কুল মাঠ, সিও বাজার, খটখটিয়া, আলমনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের জন্য অস্থায়ী প্যান্ডেল তৈরি করেছে মহানগর বিএনপি। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা দেখভাল করছেন।
রবার্টসনগঞ্জ স্কুল মাঠে দায়িত্বে থাকা যুবদল নেতা মাসুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নেতাকর্মীদের জন্য ধানের খড় বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওপরে সামিয়ানার কাপড় দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা রাতে এসব অস্থায়ী প্যান্ডেলে অবস্থান করবেন।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের জাতীয় অনেক নেতৃবৃন্দ এসেছেন। আগামীকাল সকালে অনেকে আসছেন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।”
এ ছাড়া আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ, আসাদুল হাবীব দুলুসহ অনেকে বক্তব্য রাখবেন বলে তিনি জানান।
রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন জানান, সমাবেশ হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত আছেন।
নানাভাবে সামবেশে আসেন নেতা-কর্মীরা
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে আসা বিএনপি নেতা মোবাশ্বের হোসেন জানান, শুক্রবার থেকে পরিবহন ধর্মঘটের খবর জানার পর বৃহস্পতিবার রাতেই দুই শতাধিক নেতাকর্মী তিনটি ট্রাকে যাত্রা করেন; শুক্রবার ভোরে সভাস্থলে পৌঁছেছেন। সমাবেশ সফল করেই বাড়ি ফিরবেন।
একই কথা বললেন ঠাকুরগাঁও থেকে আসা মনসুর আলী, সাজ্জাদসহ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থেকে এসেছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য মকবুল হোসেন ও আব্দুল মান্নান। তারা ২০ জন মালবাবাহী ট্রাকে করে রাতে রওনা দিয়ে সরাসরি সভাস্থলেই এসেছেন। রাতে সভাস্থলেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে আসা এক বিএনপিকর্মী পরাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দুপুরের ট্রেনে এসেছি। রংপুর স্টেশনে নামার পর কিছু লোক ভয় দেখাচ্ছিল। বলছিল, ‘খেলা হবে আসো’; নানা ধরনের কথাবার্তা বলছিল। পরে রংপুরের নেতা গেলে তারা চলে যায়।”
তিনি বলেন, “হোটেলে জায়গা নাই, আত্মীয় স্বজনও নাই। তাই আমরা এক সঙ্গে দশ-বারো জন করে মাঠে শুয়ে আছি।”
আবুল হোসেন নামের আরেকজন জানান, তারা চিড়া মুড়ি আর গুড় নিয়ে এসেছেন সঙ্গে। রাতে সেগুলো খেয়েছেন। মাঠে অনেক লোক থাকায় কোনো সমস্যা নাই।
লালমনির হাট থেকে আসা আসিকুর রহমান নামে এক বিএনপি কর্মী বলেন, “আমরা সম্মেলন সফল করার জন্য আসছি, গরিব-ধনী মানুষকে বাঁচানোর জন্য আসছি, হাসিনার পদত্যাগের জন্য আসছি। আমার নামে সাতটা মিথ্যা মামলা আছে। আমি জানিও না এসব কীজন্য দিছে।”
তিনি জানান, তারা ২৫০ জন গেছেন একসঙ্গে, তাদের নামে দুই একটা করে মামলা আছে।