বিএনপির এমপিদের শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপ নির্বাচন: ইসি


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: December 11, 2022 17:10:32 | Updated: December 11, 2022 20:38:11


বিএনপির এমপিদের শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপ নির্বাচন: ইসি

বিএনপির পদত্যাগী সংসদ সদস্যদের আসন ‘শূন্য’ ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়েয়ের গেজেট হাতে পেলেই নির্বাচন কমিশন উপ-নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, “যে দিন পদত্যাগের গেজেট নোটিফিকেশন হবে, তার পরের ৯০ দিনের মধ্যে ওই সব আসনে উপ-নির্বাচন হবে।”

ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর রোববার তারা সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মেয়াদপূর্তির এক বছর আগেই তারা সংসদ ছাড়লেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্যের পদত্যাগপত্র তিনি হাতে পেয়েছেন। এরমধ্যে পাঁচজন পদত্যাগপত্র জমা দিতে নিজেরাই এসেছিলেন। বাকি দুজনের একজন অসুস্থ, আরেকজন বিদেশে থাকার কারণে সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি।

সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, “পদত্যাগপত্র সশরীরে এসে জমা দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে পাঁচজন পদত্যাগপত্র নিয়ে এসেছেন তাদের আসন শূন্য হয়ে গেছে। বাকি আবেদনের সই যাচাই করা হবে এবং তারাই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন কিনা। সংসদ সচিবালয় তা খোঁজ নেবে।

“তবে হারুনুর রশীদ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ইমেইলে, তার সই স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। এটা গ্রহণ করা হবে না। তাকে আবার ‘স্ব স্বাক্ষরযুক্ত’ আবেদন জমা দিতে হবে।“

বগুড়া-৭ আসনের জি এম সিরাজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ এর জাহিদুর রহমান, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা এদিন স্পিকারের দপ্তরে গিয়ে পদত্যাগপত্র দেন।

আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আব্দুস সাত্তার এবং বিদেশে অবস্থানরত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এর হারুনর রশীদের পদত্যাগপত্র নিয়ে যান তাদের দলীয় হুইপ রুমিন ফারহানা।

সংবিধানের ৬৭(২) বলা হয়েছে, “কোনো সংসদ-সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন, এবং স্পীকার- কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকলে বা অন্য কোনো কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ডেপুটি স্পিকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হবে।“

জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতেও সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

কার্যপ্রণালী বিধির ১৭৭ (১) বিধিতে বলা হয়েছে, “সংসদের আসন হতে পদত্যাগ করিতে ইচ্ছুক কোনো সদস্য এই মর্মে স্পিকারকে সম্বোধন করে স্বহস্তে লিখিতভাবে জ্ঞাপন করিবেন যে, তিনি তাহার আসন হইতে পদত্যাগ করিতে ইচ্ছুক, এবং তিনি পদত্যাগের জন্য কোনো কারণ দর্শাবেন না; তবে শর্ত থাকে যে, কোনো সদস্য যদি কোনো কারণ জ্ঞাপন করেন, অথবা অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়ের অবতারণা করেন, তা হলে স্পিকার স্বীয় বিবেচনামতে অনুরূপ শব্দ বা বাক্যাংশকে বাদ দিতে পারবেন এবং উহা সংসদে পাঠ করে শোনানো হবে না৷”

সংবিধানের ১৭৮ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো সদস্যের আসন শূন্য হলে সংসদ সচিবালয়ের সচিব তা গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেন, যাতে ইসি শূন্য পদটি পূরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

আমরা এখন থেকে আর সংসদ সদস্য নই’

স্পিকারের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে ঘণ্টাব‌্যাপী আলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির পদত্যাগ করা সংসদ সদস‌্যরা।

গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেলন, “আমরা ৫ জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। বাকি দুইজন পরে এসে জমা দেবেন। আমরা যে পাঁচজন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি এই মুহূর্ত থেকে তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ হয়ে গেল। আমরা এখন থেকে আর সংসদ সদস্য নই। স্পিকার গ্রহণ করেছেন। বাদ বাকি পদক্ষেপ উনি জাতিকে, গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেবেন।“

দলের কৌশলগত সিদ্ধান্তে বিএনপি সংসদে এসেছিল বলে মন্তব্য করেন সদ্য সাবেক এই এমপি।

স্পিকারের ‘ব্যক্তিত্বের’ প্রশংসা করে তিনি বলেন, “স্পিকারের ভদ্রতা, শিক্ষা, শালীনতা… এই রকম একজন মানুষের কাছে পদত্যাগপত্র দিতে পেরেছি। আমাদের ভালোই লাগলো। আমরা চা-কফি খেলাম, আপেল, কাজু বাদাম ও সন্দেশ খেয়েছি। গল্পগুজব করলাম।”

স্পিকার পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করেছিলেন কি না– এমন প্রশ্নের উত্তরে সিরাজ বলেন, “আমরা সম্মানের সঙ্গে অনেক হাসিমুখে গল্পস্বল্প করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। দেওয়ার সময় কবির ওই লাইনটি বলেছিলাম, আবার আসিব ফিরে।”

স্পিকার ওইরকম কোনো অনুরোধ করেননি জানিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, “সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলোচনা হয়েছে, ব্যক্তিগত আলাপ করেছি। সাড়ে তিন বছর একসঙ্গে কাজ করেছি। সেখানে স্পিকারও তার স্মৃতিচারণ করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কারও যাবার প্রয়োজন নেই। তাই স্পিকার অনুরোধ করেননি।”

মোশরফ হোসেন বলেন, “আমরা যা কিছু করলাম, বা করেছি সবই দলের সিদ্ধান্ত। আমরা লাখ লাখ মানুষের সামনে আনন্দ ও গর্বের সঙ্গে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি। একদিন আগেও কেউ ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। আমরা এক বছর একমাস আগে ছেড়ে দিয়েছি স্বইচ্ছায় ও চিত্তে।”

যা আছে পদত্যাগপত্রে

সাংবাদিকদের পদত্যাগপত্র পড়ে শোনার রুমিন ফারহানা।

সেখানে বলা হয়েছে, “বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপে গণতন্ত্রহীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপর দমনপীড়ন, গণগ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং মতপ্রকাশ, বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ সর্বপোরি মহান জাতীয় সংসদকে অকার্যকর করার প্রতিবাদে, জনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানগ্রহণকারী এই সংসদের সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায়, সুস্থ শরীরে, স্থির মস্তিষ্কে অন্যের বিনাপ্ররোচণায় গভীরভাবে চিন্তা ও বিবেচনার পর অদ্য ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে সংসদ থেকে যার যার আসন থেকে পদত্যাগ করলাম।”

প্রজ্ঞাপন শিগগির

শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সংশ্লিষ্ট আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এরপর সংশ্লিষ্ট সদস‌্যদেরও পাঠনো হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। যখন অধিবেশনে বসবে সেখানেও তা জানানো হবে।

গেজেট পেলেই উপ নির্বাচনের উদ্যোগ

বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া আসনগুলোতে উপ-নির্বাচন করতে আগে আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়ের গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, “সংসদ সচিবালয়ের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়ার পরেই ইসির কাজ শুরু হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পদত্যাগের নির্দেশ গেজেট নোটিফিকেশন হবে না, ততদিন পর্যন্ত ইসির কোনো করণীয় নেই।

তিনি বলেন, “আসন শূন‌্য ঘোষণার কোনো গেজেট নোটিফিকেশন এখনও আমরা পাইনি। গেজেট পেলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। পদত্যাগের গেজেট নোটিফিকেশনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওইসব আসনে উপ-নির্বাচন হবে।”

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, পদত্যাগজনিত কারণে হোক, আর যে কোনো কারণেই হোক, জাতীয় সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে সেখানে উপ-নির্বাচন হবে।

নিয়ম অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের আগে কোনো সংসদীয় আসন শূন্য হলে উপ-নির্বাচন করতে হয়। চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ আছে এখনও এক বছরের বেশি।

“কাজেই এখন কোনো আসন শূন্য হলে নির্বাচন কমিশনকে আইন অনুযায়ী উপ নির্বাচন করতেই হবে। গেজেট পেলে এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের জন‌্য উপস্থাপন করা হবে।”

Share if you like