ঢাকার বিএনপির সমাবেশের আগের দিন সকালেও নয়া পল্টনে ফের দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ; সড়কে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড, চলছে না কোনো যানবাহন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
শুক্রবার সকালে পল্টনের ফকিরাপুল মোড় ও কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে আবারও কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসিয়ে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। যানবাহন কিংবা পথচারীদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢোকার কলাপসিবল গেইট আটকানো। কার্যালয়ের সামনেই পুলিশ সদস্যরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে। সাঁজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান ও পুলিশের গাড়ি রয়েছে ডজনখানেক।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জনসাধারণের ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে তারা নয়াপল্টনের সড়কে যানচালাচল বন্ধ রেখেছেন।
বুধবার বিকালে এ সড়কে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে একজনের মৃত্যু ও অনেকে আহত হন। তখন থেকেই পল্টনের সড়ক পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।
সংঘর্ষের সময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এরপর বিকাল ৫টায় পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালায়। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় দলটির কয়েকশ নেতাকর্মীকে।
সংঘর্ষের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় নয়া পল্টনের সড়কে যান চলাচল সচল হয়।তবে শুক্রবার সকালে আবারও পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং ওই এলাকায় অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিএনপি কার্যালয়ের গেইট বন্ধ থাকলেও ভেতরে দুই নিরাপত্তাকর্মীকে দেখা গেছে। তারা বলছেন, গত বুধবার পুলিশের অভিযানের পর বিএনপি কেউ অফিসে আসেননি। কেউ আসবেন কিনা সেটাও তারা জানেন না।
জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ডাকে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, অর্থাৎ নয়া পল্টনে ওই সমাবেশ করতে চেয়েছিল দলটি। পুলিশ সোওরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিলেও বিএনপি নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিল।
এ নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই বিএনপি নেতাকর্মীরা বুধবার নয়া পল্টনে জড়ো হতে শুরু করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে পুলিশ বিএনপি অফিসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
রাজধানীতে এই উত্তেজনার মধ্যে সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর সমঝোতার ইঙ্গিত আসে।
ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার সেই বৈঠকের পর ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, তারা একটি ‘সমঝোতায়; এসেছেন।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, নয়া পল্টনে পুলিশ সমাবেশ করতে দেবে না, আর বিএনপিও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে না। নয়া পল্টন বাদ দিলে তারা এখন কমলাপুরের ফুটবল স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে রাজি আছেন।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মিরপুরের বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে বলার কথা জানান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন।
বুলু ও হারুণ দুজনই জানান, এখন তারা দুটি স্থানই পরিদর্শনে যাবেন। তারপর শুক্রবার এর যে কোনো একটি স্থান চূড়ান্ত করা হবে।
কিন্তু ভোর হওয়ার আগেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন জানিয়েছেন।