বান্দরবানে পাহাড়ের গহীনে সশস্ত্র দল ‘কেএনএফ’ বা ‘বম পার্টি’র আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র এক সদস্য ‘নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে খুন’ হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত ওই জঙ্গিকে পাহাড়েই কবর দেওয়া হয়, যার নাম ও পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে আদালতের নির্দেশে মরদেহ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছেন রুমা উপজেলার ইউএনও মো. মামুন শিবলী।
তিনি বলেন, রোববার মরদেহটি উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে রওনা দেওয়া হবে।
রুমা উপজেলা থেকে পাহাড়ের অনেক ভেতরে লুয়ংমুয়াল পাড়া এলাকার জঙ্গলে ওই জঙ্গিকে কবর দেওয়া হয়। পুলিশ ও র্যাবের একটি দল গত শুক্রবার সম্প্রতি গ্রেপ্তার দুই জঙ্গিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সেই কবর শনাক্তও করে এসেছে।
এরপর আদালতের নির্দেশে ওই কবরে মরদেহের সন্ধানে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের গহীন সেই জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও তীব্র শীতের প্রতিকূল আবহাওয়ায় তা বাতিল করা হয় বলে জানান রুমা থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন।
তিনি জানান, দিন কয়েক আগে রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার গহীন পাহাড়ে অভিযানকালে গ্রেপ্তার পাঁচ জঙ্গির কাছ থেকে রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ‘খুনের’ এ তথ্য জানা যায়।
এরপর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে এ তথ্য জানার পর তদন্ত কর্মকর্তা তা আদালতকে অবহিত করেন। পরে আদালত জঙ্গির কবর শনাক্ত করে মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেয় বলে তিনি জানান।
শনিবার সাংবাদিকদের ওসি বলেন, “আদালতের নির্দেশে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত জঙ্গির মরদেহ উত্তোলনের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু প্রতিকূল আবহওয়ার কারণে যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার মরদেহ উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।“
গত বৃহস্পতিবার বান্দরবান জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায়।
এসব জঙ্গিরা রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার গহীন পাহাড়ে সশস্ত্র দল ‘কেএনএফ’ বা ‘বম পার্টি’র আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল বলে র্যাবের ভাষ্য।
গ্রেপ্তার জঙ্গিদের মধ্যে চারজন হলেন- নোয়াখালীর নিজামুদ্দিন হিরণ ওরফে ইউসুফ (৩০), সিলেটের সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন (৩০), কুমিল্লার সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা (২৭) ও বায়েজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াছ ওরফে বাইরু (২১)। এবং বাকি একজন কুমিল্লার কিশোর (১৭)।
পুলিশ জানায়, ওই দিনই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে রাঙামাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
তাদেরই দুজন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে খুনোখুনির ঘটনা এবং কবর দেওয়ার তথ্য জানায়।
পরদিন শুক্রবার দুপুরে পুলিশ ও র্যাবের একটি দল ওই দুই জঙ্গিসহ বান্দরবানের থানচি উপজেলা হয়ে ঘটনাস্থল রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম লুয়ংমুয়াল পাড়া এলাকার পাহাড়ে যান। তারা সেখানে নিহত জঙ্গির কবরও শনাক্ত করে। পরে পুলিশ বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে অক্টোবরে সংবাদ সম্মেলন করে জানায় র্যাব।
জঙ্গিদের পাহাড় যোগের এ তথ্য পাওয়ার ওই সময় থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় যৌথ অভিযান চালাচ্ছে র্যাব ও সেনা সদস্যরা। পরে এ অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও।
যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১২ জন সদস্য এবং কেএনএফের পাহাড়ে যারা ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত তাদের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গ্রেপ্তার সদস্যদের বরাতে র্যাব ২১ অক্টোবর জানিয়েছিল, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সাথে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়।
পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফ’র ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে চুক্তিও হয় বলে সেদিন জানানো হয়েছিল।
সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কেএনএফ সদস্যদের খাবার খরচ বহন করে জামাতুল আনসার।
সবশেষ অভিযানে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারাও এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সেখানে প্রশিক্ষণে গিয়েছিলেন।
কেউ কেউ প্রশিক্ষণ শেষ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন বলে বৃহস্পতিবার বান্দরবানে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।