নতুন বছরের প্রথম দিন দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় আয়োজন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বাণিজ্য মেলা বসল পূর্বাচলে। মেলায় প্রদর্শনী কেন্দ্রের দুটি হল ছাড়াও বাইরের প্রাঙ্গণে স্টল প্যাভিলিয়ন ও রেস্টুরেন্টসহ ৩৩১টি স্থাপনা রয়েছে।
এবারের মেলা থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি স্পট অর্ডার পাওয়ার আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতবারের মেলা থেকেও সমপরিমাণ স্পট অর্ডার পাওয়া গিয়েছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা শেরেবাংলা নগরে হয়। কোভিড মহামারীর কারণে ২০২১ সালে মেলা হয়নি। এরপর ২০২২ সালে কোভিডের বিধিনিষেধের মধ্যেই পূর্বাচলে প্রদর্শনীর স্থায়ী কাঠামোতে প্রথমবার মেলা বসে।
মহামারীর কারণে ওই অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এবারের অনুষ্ঠানে বলেন, “ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলাম। তবে ডিজাইন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আমি ছিলাম। এজন্য এখানে আসার আগ্রহ বেশি।”
মহামারী আর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা তখনও ‘সচল রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
বাসস জানিয়েছে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। এছাড়া বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
দেশের রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ নামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয় অনুষ্ঠানে।
শনিবার মেলা প্রাঙ্গণ বিবিসিএফইসি এর মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, এবার ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এসব দেশের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ১৭টি।
প্রদর্শনী কেন্দ্রের ভেতরে হল ‘এ‘তে ৮৪টি এবং হল ‘বি’তে ৯০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রদর্শনী হলের সামনে ও পেছনে প্যাভিলিয়ন ৫৭টি। পেছনের মাঠে রেস্টুরেন্ট ২৩টি। এছাড়া হলের সামনে ও পেছনে স্টল রয়েছে ৬০টি।
নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেইট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সকল এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। এবার বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরাও দায়িত্ব পালন করবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে।
দর্শনার্থীদের জন্য তথ্যকেন্দ্র এবং ব্যাংকিং সেবা দিতে মেলায় থাকছে জনতা, ট্রাস্ট ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। পাশাপাশি একাধিক ব্যাংক বুথ স্থাপন করেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে দুটি মা ও শিশু কেন্দ্র।
মেলায় দোতলা গাড়ি রাখার জায়গা ছাড়াও হলের বাইরে বড় জায়গাজুড়ে প্রায় এক হাজার গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ও কয়েকটি পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসও চলবে।
৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খোলা থাকবে এক ঘণ্টা বেশি।
এবার প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৪০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইনেও মেলার টিকেট পাওয়া যাবে। বিকাশের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ছাড়ে টিকেট কেনা যাবে।