সকাল ৯টায় শুরু ম্যাচে উইকেট ভীষণ স্যাঁতস্যাঁতে। মন্থর ও খুবই নিচু বাউন্সের উইকেট। শুরু থেকে টার্নও মিলল প্রচুর। এমন উইকেটে যেমন ব্যাটিং প্রয়োজন, বাংলাদেশ করল ঠিক উল্টো। সোজা ব্যাটে খেলার বদলে একের পর এক ব্যাটার বেছে নিলেন ক্রস ব্যাটের শট। দলকে খেসারতও দিতে হলো বাজেভাবে।
নারী এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে হোঁচট খেল বাংলাদেশ। নিগার সুলতানার দল পাকিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হলো ৯ উইকেটে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে সোমবার ২০ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পারে ৮ উইকেটে স্রেফ ৭০ রান। পাকিস্তান জিতে যায় ৪৬ বল বাকি রেখেই।
পাকিস্তানের সঙ্গে ১৬ টি-টোয়েন্টি খেলে ১৫টিতেই হারল বাংলাদেশ। একমাত্র জয়টি চার বছর আগে এশিয়া কাপে কুয়ালা লামপুরে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ব্যাটাররা পুল, ফ্লিক, সুইপের মতো শট ক্রমাগত খেলে ডেকে আনেন নিজেদের বিপদ। এক ব্যাটার দেখে শিক্ষা নেননি অন্যরাও।
আত্মঘাতী ব্যাটিংয়ের শুরু প্রথম ওভার থেকেই। আগের ম্যাচে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে ভালো শুরু এনে দেওয়া শামিমা সুলতানা এবার ফেরেন ১ রানে।
মিডিয়াম পেসার ডায়না বেগের লেংথ বল পুল করার চেষ্টা করেন শামিমা। বল অনেকটা নিচু হয়ে ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে।
পরের ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার সাদিয়া ইকবালের ঝুলিয়ে দেওয়া বল স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড ফারজানা হক (১)। দলের সফলতম ব্যাটার তিনি, অথচ শট দেখে মনে হচ্ছিল বুঝি স্লগ ওভারের খেলা চলছে।
উইকেট পতনের পাশাপাশি রানও থাকে থমকে। অবিশ্বাস্যভাবে, প্রথম ৪ ওভারে রান আসে স্রেফ ৩!
পঞ্চম ওভারে বিদায় নেন রুমানা আহমেদও। ডায়নার ভেতরে ঢোকা বল ফ্লিকের মতো করতে গিয়ে বিদায় নেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। দলের রান তখন ৩ উইকেটে ৩।
অধিনায়ক নিগার পঞ্চম ওভারে পরপর দুটি বাউন্ডারি মারেন দারুণ ফ্লিক ও স্কয়ার ড্রাইভে। পাওয়ার প্লেতে তার পরও রান আসে মাত্র ১২। ডট বলই ছিল ৩০টি!
নিগার ও লতা মণ্ডল চেষ্টা করেন দলকে বিপদ থেকে উদ্ধারের। কিন্তু আবার ফিরে আসে সেই আড়াআড়ি ব্যাটে খেলার ভূত। অফ স্পিনার নিদা দারকে সুইপ খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন লতা (১২)।
দারুণ ফর্মে থাকা নিগারও এ দিন পারেনি স্রোতের বিপরীতে লড়াই চালিয়ে যেতে। অনেকটা সময় উইকেটে থাকার পর নিদা দারের তীক্ষ্ণ টার্ন করা বলা ফ্লিক করার চেষ্টা করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এই উইকেটে যা ঝুঁকির। এলবিডব্লিউ হয়ে যান ৩০ বলে ১৭ রান করে।
এরপর অভিজ্ঞ সালমা খাতুন যা একটু লড়াই করেন। বৃষ্টিতে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার আগে ও পরে মিলিয়ে তিনি চেষ্টা করেন দলকে এগিয়ে নেওয়ার। তবে লাভ খুব একটা হয়নি। সোবহানা মোস্তারি সীমানায় ধরা পড়েন ছক্কার চেষ্টায়। শেষ দিকে রান আউট রিতু মনি ও নাহিদা আক্তার।
সালমা অপরাজিত থাকেন ২৯ বলে ২৪ রান করে।
উইকেট যত কঠিনই থাকুক, ৭০ রান নিয়ে লড়াই করা কঠিন। বাংলাদেশ সেটা পারেওনি। বরং ব্যাটারদের মতো বোলাররাও এ দিন বেশ এলোমেলো। আলগা বল হতে থাকে প্রায় প্রতি ওভারেই। সময়ের সঙ্গে উইকেটও সহজ হয়ে আসে কিছুটা। পাকিস্তান তাতে রান তাড়ায় ছুটে যায় অনায়াসেই।
সিদরা আমিন ও মুনিবা আলি উদ্বোধনী জুটিতেই দলকে নিয়ে যান জয়ের অনেকটা কাছে। ৪৯ রানের জুটির পর মুনিবা আউট হন সালমার বলে শামিমার দারুণ ক্যাচে।
সিদরা ও বিসমাহ মারুফ বাকি পথটুকু পাড়ি দেন অনায়াসে। সানজিদা আক্তার মেঘলার বলে মিসমাহর দারুণ শটের বাউন্ডারিতে পাকিস্তান শেষটাও করে দাপটে।
বোলারদের ম্যাচে ৩৫ বলে অপরাজিত ৩৬ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান সিদরা আমিন।
বাংলাদেশের পরের ম্যাচ মালেয়েশিয়ার বিপক্ষে, বৃহস্পতিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ৭০/৮ (শামিমা ১, ফারজানা ১, নিগার ১৭, রুমানা ১, লতা ১২, সালমা ২৪*, সোবহানা ২, রিতু ৪, নাহিদা ৪, সোহেলি ৩*; ডায়না ৩-১-১১-২, সাদিয়া ৪-১-১০-১, নাশরা ৪-১-১৩-০, তুবা ৪-০-১৩-০, নিদা ৪-০-১৯-২, ওমাইমা ১-০-৪-১)।
পাকিস্তান: ১২.২ ওভারে ৭২/১ (মুনিবা ১৪, সিদরা ৩৬*, বিসমাহ ১২*; সালমা ৪-০-২৭-১, মেঘলা ২.২-১-১২-০, নাহিদা ২-০-১১-০, রিতু মনি ১-০-৬-০, রুমানা ১-০-৭-০, লতা ২-০-৭-০)
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: সিদরা আমিন।