মাছ ও ডিমের চড়া দামের মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে অন্তত ২৫ টাকা বেড়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
একই সঙ্গে এক দিনেই পেঁয়াজের দরও ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ কম থাকায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে; মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়।
এদিকে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দামও বেড়ে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা হয়েছে।
নিত্যপণ্যের চড়া দামের মধ্যে নতুন করে মুরগি ও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, “আজ এটা, কাল সেটা, প্রতিদিনই তো কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে। আমরা এখন খাব কী!
“চাল-ডাল তো আগেই বেড়েছে। মাছ-মাংসের বাজারে যাওয়া যায় না। দরিদ্র মানুষের আমিষের শেষ গন্তব্য ফার্মের মুরগিও যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের না খেয়ে মরে যেতে হবে।”
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আর মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না। সবার আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।”
শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়, যা গত সপ্তাহের শুরুতে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা ছিল। বৃহস্পতিবারও ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি।
এছাড়া সোনালী মুরগি আগের দরেই ৩৩০ টাকা, লেয়ার ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগর বাজারের আল মদিনা ব্রয়লার হাউজের মুরগি ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন জানান, পাইকারি বাজারে মুরগির দর বাড়ছে। এ সপ্তাহে বিশেষ করে ব্রয়লারের দাম অত্যাধিক বেড়েছে। গত সপ্তাহ ১৭০ টাকা দরে বিক্রি করলেও এখন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকার নিচে বিক্রির সুযোগ নেই।
তবে কী কারণে দাম বেড়েছে সেই কারণ এই খুচরা বিক্রেতা বলতে পারেননি।
ঢাকায় মুরগির বড় পাইকারি হাট কাপ্তান বাজারের মেসার্স ফারুক ট্রেডার্সের মালিক ওমর ফারুক জানান, কয়েক দিন ধরে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহে সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বাড়ছে।
“খামার থেকে আগের মত চাহিদা অনুযায়ী মুরগি আসতেছে না। এদিকে মাছ-মাংসের দাম বাড়তি বলে বাজারে মুরগির চাহিদা আরও বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। এইসব কারণে দাম বেড়েছে বলে মনে হয়।”
তিনি জানান, ব্রয়লার মুরগি পাইকারি দর ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালী ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা এবং লেয়ার ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ এক দিনেই অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দর বাড়িয়ে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
এক দিন আগেও দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও শুক্রবার তা বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। একইসঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে বলে তারা জানান।
গত সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও শুক্রবার সেগুলো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রামপুরা বাজারের তাহের স্টোরের মালিক আবু তাহের বলেন, “বেশ কয়েক মাস পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল ছিল। এ সপ্তাহে হঠাৎ করেই দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে আজকের বাজারে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গতকালের চেয়ে একদিনের ব্যবধানে পাইকারি দরই ৫ টাকা বেড়েছে।”
ঢাকার পেঁয়াজ-রসুনের আড়ত শ্যাম বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস জানান, শুক্রবার দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দর ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। এছাড়া কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ভারতীয় পেঁয়াজের পাইকারি দর ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা হয়েছে।
দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভারতই ভালো বলতে পারবে কেন দাম বাড়লো। এ সপ্তাহে পেঁয়াজের আমদানি কমে গেছে। এখন কেন কমেছে সেই কারণ তো আমরা এখান থেকে বলতে পারছি না।”
এদিকে বাজারে মাছ ও ডিমের চড়া দামে তেমন হেরফের হতে দেখা যায়নি। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের মাছ কেজিতে অন্তত ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে।
একবারে সীমিত আয়ের মানুষের বেশি চাহিদার পাঙ্গাস মাছের কেজিপ্রতি দামও বেড়ে ২০০ টাকায় ঠেকেছে; যা দীর্ঘদিন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ছিল। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।
এছাড়া খামারে চাষ করা রুই মাছ ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বেলে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কৈ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নদী বা হাওরের মাছ বলে বাজারে যেগুলো বিক্রি করেন দোকানিরা সেগুলোর দর এর চেয়ে অনেক বেশি।
অপরদিকে গত কয়েক মাস ধরে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ১১৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল।
এদিকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা আসার ১০ দিন পর নতুন দামের তেলে কেবল বাজারে মিলতে শুরু করেছে।
দোকানিরা জানান, গত সপ্তাহে বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার থেকে আগের দরেই তেল কিনতে হয়েছে তাদের। এছাড়া আগের দরে কেনা যে তেল ছিল সেগুলো বিক্রিও প্রায় শেষ। এ সপ্তাহে নতুন দরে বোতলজাত তেল আসায় সেই অনুযায়ী বিক্রি করা হচ্ছে।
গত ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ভেজিটাবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারের বোতল ১৯২ টাকা থেকে কমিয়ে ১৭৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করে। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম করা হয় ৮৮০ টাকা।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই দরের নির্ধারণের বিষয়টি সার্কুলার আকারে প্রকাশ করে।
শুক্রবার বাজারে নতুন দামেই তেল বিক্রি করতে দেখা যায়। এরমধ্যে কোনো কোনো কোম্পানি সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতলে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।