মহামারীর মধ্যে যুদ্ধের খাঁড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক, যেখানে সরকার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরে রেখেছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত সংস্থাটির গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টসে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থ প্রবৃদ্ধির এই প্রক্ষেপন দিয়েছে।
বিশ্ব সংস্থাটি বলছে, চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি খানাগুলোর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে, যার প্রভাব পড়বে সার্বিক অর্থনীতিতে।
অর্থনীতির গতিপথে তরতরিয়ে চলতে থাকা বাংলাদেশ হোঁচট খায় কোভিড মহামারীতে, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে খাবি খাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এর মধ্যেও অর্থনীতির সচলে সচেষ্ট থাকা সরকার ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে, যাকে অনেকেই বলছেন উচ্চাভিলাষী।
বৈশ্বিক অস্থিরতার ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে ভালো করলেও অর্থবছরের শুরুতে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
তবে বৈশ্বিক সংকটের বিস্তৃত পরিসর বিবেচনায় নিয়ে কয়েক মাস পরে গত অক্টোবরে সেই অঙ্কটি ৬ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল সংস্থাটি। এবার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনল।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি বাড়িতে দেবে শিল্পোৎপাদনের খরচ, তার সঙ্গে প্রভাব রাখবে জ্বালানি সংকট, আমদানি সংকোচন, মুদ্রা নীতির কঠোরতা।
সংস্থাটি বলছে, বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তার জেরে বাংলাদেশেও তা বাড়তির দিকেই থাকবে, ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা তার বেশ উপরেই থাকবে।
গত জুন থেকে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার মান ১৮ শতাংশ কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ৮০০ কোটি ডলার, সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যস্ফীতিকে গত ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ৭ শতাংশে নিয়ে তোলে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতি বাংলাদেশের মতো আরও দেশকে ঋণ পেতে আইএমএফের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। যে ঋণের অর্থ দিয়ে ঠেকা দেওয়ার কাজটি চালিয়ে নেওয়া যায়।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বৈশ্বিক সংকটের বড় ধাক্কা নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বিশ্বের জ্বালানি বাজারে অস্থিরতার কারণে দেশটিতে গৃহস্থালি কিংবা শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলছে এবং তা আরও বাড়তে পারে।
সরকার অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি উচ্চ মূল্যের কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে লোড শেডিং দিচ্ছে, কারখানা খোলা রাখার সময় কমাচ্ছে, বিলাস পণ্য কেনা কঠিন করে তুলছে। এর সব কিছুই হচ্ছে ডলার সাশ্রয়ে।
তবে চলমান সংকট পেরিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের গতিতে ফিরবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে যাবে বলে আভাস দিচ্ছে সংস্থাটি।
চলমান সংকট শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বরং বিশ্বের অনেক দেশই মন্দার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
সংস্থাটি এখন বলছে, চলতি অর্থ বছরে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যেখানে গত জুন মাসে এই হারটি ৩ শতাংশ হওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছিল।